Wednesday, February 11, 2009

একটি কৈফিয়ত

প্রিয় তুমি,

আমার এ চিঠি কোনদিন তুমি পড়বে, এ অসম্ভব ভাবনা কখনই আমার মনে খেলে যায় নি। কি করেই বা পড়বে, তুমি তো এখন আর এ ভূবনের কেউ নও। এ জগতের মেয়াদ শেষ করে অনেক আগেই অন্য ভূবনে নিজের বাস গড়েছ। বড় অসময়ে চলে গেছ, তবে ফেলে গিয়েছ একরাশ স্মৃতি! আমাদের ছেড়ে বিদায় নেবার সে যাওয়াটা যেন সম্পূর্ন নয় - রেখে গিয়েছ ছায়া তোমার বংশধরদের মাঝে। দৃঢ়ভাবে নিজের আসন গেড়ে নিয়েছ এই পৃথিবীতে। বহুদূরে চলে গেছ, তবু বার বার আমরা তোমার অপার্থিব কোলাহল অনুভব করি, চারিপাশে শুনতে পাই তোমার অব্যক্ত ধ্বনি - আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে।

তোমার কাছে আমি হয়ত বা মূল্যহীন, অপাংক্তেয়। আমার কথা শোনার কোন ফুসরত তোমার কখনই ছিল না। কিংবা কখনও যদি আমার কোন কথা দুদন্ডের জন্য শুনেও থেকেছ, তবুও তা তোমার কাছে ছিল একেবারেই গুরুত্ব হীন, আবার কখনও বা উপহাসের বিষয় বস্তু। থাক না হয় সেসব কথা এখন। তবে জানবে, এত অবহেলা সত্ত্বেও আমার কাছে তুমি কোন অংশে গুরুত্বহীন নও। প্রবাসের দুর্লভ অবসরের হাজারো স্মৃতি চারনে হাজার মুখের যে মুখটি আমাকে সবচেয়ে বেশী নাড়া দিয়ে যায়, তা তোমার মুখ। প্লে ব্যাক হয়ে ভাসতে থাকে তোমার আনন্দ, অভিমান, উচ্ছাস কিংবা প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষার আকুলতা। এ পৃথিবীতে কাটিয়ে যাওয়া তোমার দিনলিপিতে প্রতিটি প্রত্যক্ষকৃত ক্ষন আমার স্মৃতিতে অম্লান। অথচ, তোমাকে তো আমি সবসময়ই ভুলতে চেয়েছি। আমার অনুভূতি থেকে বার বার সরিয়ে দিতে চেয়েছি তোমাকে, তোমার সমস্ত চিহ্নকে। সে চেষ্টার সবই নিস্ফল আর ব্যর্থ, তুমি স্বমহিমায় ঠাই করে নিয়েছ আর আমার এ নিস্ফল প্রচেষ্টায় শুধু ছেলেমানুষী এক আমোদ অনুভব করেছ।

অনেক দিন থেকে তাই ভাবছি তোমাকে চিঠি লেখার কথা। কিভাবে কি করে তোমার সাথে আমার পরিচয়, আমাদের সম্পর্ক - এইসবকে আবারো ঝালাই করা। কে জানে, হয়ত এই চিঠির মাধ্যমে তোমার ছায়া আর অশরীরী অস্তিত্বকে নাড়া দিলেও দিতে পারি। কিংবা হয়ত নয়, শুধু অন্য কারো জীবনের মাঝে যাতে তোমার জীবনের ছায়া না দেখতে পাই - সে বাসনার তীব্রতা আর আকাংখাতে এ চিঠি লিখতে আমি প্ররোচিত হয়েছি। এক ধরনের দায় বদ্ধতা বলতে পারো। যে দায়বদ্ধতা শুধু আমার নিজের কাছে, তোমাকে এবং তোমার মত হাজারো অনেককে ভালবাসার ফলশ্রুতিতে, তাদের জীবনকে সরল রৈখিক দেখতে চাওয়ার মানসিকতাতে।

তোমার সাথে আমার পরিচয় হঠাৎ। ৯০ সালের কোন এক সকালে। দিন তারিখ মনে নেই। তোমার সেদিনকার উচ্ছলতা আর সাবলীলতা আমার মত নির্লিপ্ত মানুষের চেতনাকেও স্পর্শ করেছিল। তোমার মাঝে যে কিছুটা ব্যতিক্রমতা ছিল তা আমার চোখ এড়ায় নি। তোমার জামার ডিজাইন সেসময়টাতে ততটা জনপ্রিয় ছিল না। আর দশটা মধ্যবিত্তের মতই সাদামাটা পোশাক, তবুও তা দৃষ্টি আকর্ষন করে। ফাক পেয়ে আমি তোমাকে বললাম,

- থাকো তো ঢাকাতেই। তবে হলে কেন সিট নিলে?

- নাহ, আমার এরকম যাওয়া আসা ভাল লাগে না।

- যাক, ভাল হল। তুমি আর আমি পাশাপশি রুমে। প্রতিবেশীনি। যদিও ডিপার্টমেন্ট আলাদা।

- ফার্স্ট ইয়ার তো সবার জন্য একই। প্রায় সব সাবজেক্ট একই।

সেদিন সেভাবেই পরিচয়। তুমি আর আমি আমাদের হল আর বুয়েট জীবন শুরু করি। পাশাপশি রুম, কিন্তু তোমার আমার মন মানসিকতার বিস্তর পার্থক্য প্রথম থেকেই ছিল প্রকট। তাই তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় নি। আমরা কিছুটা এড়িয়ে চলতাম একজন অন্য জনকে। তাহলেও আমি তোমার সাহসী, আর কিছুটা বেপরোয়া চালচলনকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেছি। কিন্তু আমার মধ্যে তো ভাল লাগার কিছু ছিল না। তাই তুমি আমাকে পছন্দ করতে পারো নি, বন্ধুত্বের মর্যাদা কিংবা সম্মান দেয়া দূরে থাক।

মেধায় তোমার কোন কমতি ছিল না, কিন্তু সেটাকে একাডেমিক কাজে লাগানোতে ছিল তোমার উন্নাসিকতা। তুমি ক্লাসে যাবার চাইতে বরং স্বল্প পরিচিত একজনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে বেশী ভালবাসতে। ক্রমেই সে তোমার সবচেয়ে প্রিয়জনে পরিনত হল। করিডোরে প্রতি মুহুর্তে কান সজাগ করে থাকতে কখন তোমার ডাক আসবে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ রইল না। পরীক্ষা এলে কোনমতে উৎরে যেতে। হলের স্বাভাবিক নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে তোমার যত্র তত্র ঘুরে বেড়ানো নিয়ে চারিদিকে কানাঘুষা, প্রবল সমালোচনা। যা তুমি মোটেও আমল দিলে না। একই অভিযোগে সিট ক্যানসেলের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেসব কিছু তোমাকে মোটেও বিচলিত করে না। প্রিয় পুরুষটিই তখন তোমার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী মূল্যবান।

এভাবেই যদি চলতো, তাহলে হয়ত সমাপ্তি টানা খুব কঠিন হত না। আমারও এ চিঠি লেখার কোন প্রয়োজন থাকত না। শুধু একটি লাইন, "অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে কালাতিপাত করিতে লাগিল।" দিয়ে উপসংহার টানা যেত। কিন্তু উপর ওয়ালার ইচ্ছা ছিল অন্য রকম। তোমাদের সম্পর্ক বার বার টানাপোড়েনের ক্ষতে ক্ষত বিক্ষত হতে লাগল। প্রিয় মানুষটির প্রশ্নবোধক নৈতিকতা ছিল সারা ক্যাম্পাসে আলোচিত একটি বিষয়। কিন্তু তারপরও তুমি হৃদয়ের দাবীতে ছুটে যেতে তারই কাছে। ভাবতে, মানুষ বদলায়, সেও হয়ত বদলাবে।

সময় বয়ে যায়। বছর ঘুরে বছর চলে যায়। শত্রুর কথাই সঠিক হল। তুমি চূড়ান্ত ভাবে প্রতারিত হলে। শুধু প্রেমিক পুরুষের কাছে নও, বরং সাথে সাথে সহোদরার কাছেও। তোমার মাধ্যমেই তাদের ছিল পরিচয়, আর তোমাকে মাইনাস করেই তারা চুক্তিবদ্ধ হল। কি করে এত কিছু হল, তা আমার জানা নেই। কিন্তু তুমি জেনেছ, তোমাকে মেনে নিতে হয়েছে এক ভয়ংকর, আপাত অসম্ভব এক বাস্তবতাকে। তাদের বিয়ের সানাই যখন বাজল, তখন তুমি পরাজয়ের ক্লান্তিতে ক্লান্ত। অথচ তোমার প্রিয় বোনের বিয়েতে তোমারই সবচেয়ে আনন্দিত হবার কথা। সে আনন্দ ভাগ করে নেয়ার কথা প্রিয় পুরুষটির সাথে। হায় নিয়তি। সে পুরুষ তো আর তখন তোমার কেউ নয়, বরং তোমার বোনের সুইট হার্ট। যাকে একদিন পৃথিবী ভেবে তুমি সমাজ সংসার সবকিছুকে অগ্রাহ্য করেছিলে, সে এখন তোমার বোনের আচলে বাধা। এই নিষ্ঠুর প্রতারনা তোমার হৃদয়কে ভেংগে দিল। মানুষ কি করে এত দুঃখ সইতে পারে।

সে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় তুমি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করলে। সে ভুল শুধু তোমার জীবনকে উলট পালট করেনি, বরং পাল্টে দিয়েছে আরো কটি জীবনকে। সেদিনের বিষন্নতা কাটাতে তুমি নিজেকে সপে দিলে অযোগ্য অপদার্থ এক গুন্ডার হাতে। তোমার বিয়ে হল পরিবারের সবার অমতে। যার কাছে আশ্রয় পেতে চাইলে, কোন অংশেই তোমাকে বটবৃক্ষের ছায়া দেবার মানসিকতা তার ছিল না। এদিকে তোমার পরিজনরা তোমার বারংবার ঔদ্ধত্যে বিমূখ হয়ে গিয়েছিল। যার কারনে তুমি হারালে তোমার স্বজনদের সহযোগিতা।

আগেই বলেছি, তোমার মেধা ছিল অতুলনীয়। স্ট্রাকচার পরীক্ষার আগে যখন পুরো হলের সবাই আতংকিত, তখনও তুমি নিশ্চিন্ত মনে করিডোরের কলামে হেলান দিয়ে প্রহর গুনতে প্রিয় মানুষটির। এতটা অমনোযোগী, অথচ বুয়েট উৎরে যেতে কোন সমস্যা হয় নি। তাই, বিয়ে নিয়ে মনোমালিন্যে পরিবারের অসহযোগিতা তোমাকে দমাতে পারেনি মোটেই। তুমি চলে এলে আমেরিকায়, শুরু করলে পি এইচ ডি, সাথে সাথে চাকুরী। জীবন সংগ্রামে হার মানার মত মেয়ে তুমি নও।

সে সময়টা আমি নিজে ছিলাম নিজের ভূবনে অবগাহনরত। কিছু বিষয় নিয়ে আমাকে দাড়াতে হয়েছে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি। ফলে অনেকটা জন বিচ্ছিন্ন অবস্থা ছিল আমার। তাই তুমি কবে আমেরিকায় এসেছ, কিংবা চাকুরী করতে - তার খবর রাখার মত অবস্থা আমার ছিল না।

কেটে যায় দিন, মাস। তারপর সেই ভয়ংকর দিন এল। সেদিনের শুরুটা ছিল আর দশটি দিনের মতই সাধারন, সাদামাটা। ফোন বাজছে, কিন্তু আমি আমার সদ্য ভূমিষ্ট কন্যার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত। আনসারিং মেশিনে মেসেজ রাখছে আমার বুয়েট ক্লাশমেট কাম বান্ধবী। সেটা শুনে আমার পৃথিবী যেন দুলে উঠল। স্তম্ভিত অবস্থার প্রাথমিক ঝড় কেটে যেতেই আমি সব কাজ ফেলে কল ব্যাক করলাম:

: হ্যালো। ফোন করেছিলে।

: হ্যা। আমাদের সাথের নীতুকে চিনতে? ও মারা গেছে।

: মানে? কি বলছ এসব। - হতভম্ব অবস্থা কিছুটা কাটতে আমার পাল্টা প্রশ্ন।

: হয় খুন, নয় আত্মহত্যা। পুলিশ এখনও শিওর নয়। আমি এর বেশী কিছু জানি না।

: কি বলছ কিছু বুঝতে পারছি না। যাহোক, আমি দেখি এর প্রতিবেশী সুমিকে ফোন করি। ও নিশ্চয়ই জানবে।

ফোন রেখে আবার ফোন করলাম।

:হ্যালো সুমি।

: হ্যা। বলছি।

: নীতু নাকি মারা গেছে।

: কাল রাতে। ঘুমের মধ্যে।

: আর কি জানো।

: এই সকালে নীতুর স্বামী সবাইকে ফোন করে বলছে ও নাকি আত্মহত্যা করেছে।

: ও তো স্ট্রাগল করা একটা মেয়ে। আত্মহত্যা করতে যাবে কেন?

: সেটাই তো কথা। এটা খুন ছাড়া আর কিছু নয়। এখন পুলিশ ইনভেস্টিগেট করছে।

: আচ্ছা, তুমি কি কিছু জান। ওদের মধ্যে কি কোন গোলমাল তো চলছিলো?

: তা তো ছিলই। সে বাসা বদলাতে চাইতো। কিন্তু নীতু তাতে রাজী ছিল না। আগের রাতেও মানুষ ডেকে একটা সালিশ টাইপের হয়েছে।

এরই মাঝে মেয়ে আমার কেদে উঠল। মেয়ের কারনে সেদিন আর কথা আগাল না। এদিকে মাস খানেক ধরে এর ওর কাছ থেকে হাজারো স্ক্যান্ডাল শুনতে শুনতে আমি নিজেও হতভম্ব। তাই দিন কয়েক বাদে আবার সুমিকে ফোন করি।

: স্যরি সুমি। খালি দরকারে ফোন করি। কিছু মনে কর না।

: নাহ, কি ভাবব। আমিও তো অফিস নিয়ে মহাব্যস্ত।

: নীতুর ঘটনা নিয়ে অনেক কিছু শুনছি। কি বিষয়।

: কি শুনছ, জানি না। তবে নীতু যে স্বামীর হাতে খুন হয়েছে সেটা শিওর। নীতু ডিভোর্সের প্ল্যান করছিল।

: ডিভোর্স? কেন? তার বাবার হাজারো চাপ সত্ত্বেও তো সে ডিভোর্স করে নি। সেজন্য তার বাবা ভিসা পর্যন্ত প্রসেস করলেন না। আজকে এত পরে সে কেন ডিভোর্সের চিন্তা করছিল?

: আসলে এখানে তৃতীয় আরেকজন জড়িত।

: মানে? অন্য কারো সাথে নীতুর অ্যাফেয়ার চলছিলো?

: ওখানেরই এক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠছিলো। সে ছেলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে তাদের সম্পর্কের কথা। ওটাই খুনের মোটিভ।

: কি বলছ। এটা তো ওয়ান সাইডেড হতে পারে। হয়ত নীতুর পক্ষ থেকে কোন দায় নেই।

: নাহ, ওর কাছে নীতুর একটা চিঠিও পাওয়া গেছে। খুব ডিপলি ইনভলভড ছিল। চিঠি একটা প্রমান।

আমি নীরব হইলাম। আর তেমন কিছু জানার নেই। তোমাকে সুমিও খুব ভালবাসত। তাই অনেক কিছু সে বলতে চায় নি। সুমির নীরবতা, ইতস্তত ভাব আমাকে বুঝিয়ে দেয় অনেক কিছু। আমি বুঝতে পারি তোমার এ সম্পর্ক প্লেটোনিক ছিল না। কারো কাছে দায়বদ্ধতা নিয়ে তুমি কখনও চল নি, তাই এরকম সম্পর্ক তোমার কাছে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিক মনে হয় নি। সন্তান কিংবা সমাজ কেউই তোমার কাছে বিবেচ্য নয়। অবলীলায় তাদের উপেক্ষা করে নিজের খুশীমত চলার কঠিনতম ক্ষমতাটুকু তোমার ছিল।

কল্পনা ছেড়ে আমি ফিরে আসি বাস্তবে। সুমিকে জিজ্ঞাসা করি:
: ওর বাচ্চাদের কি অবস্থা?

: ওদের কাস্টডি নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয় নি।

: এই যে আগের রাতে সালিশ টাইপের বৈঠক হল, তাতে কি হল?

: কি আর হবে। নীতু উড়িয়ে দেয় সব। বলেছে, একটা দুইটা অ্যাফেয়ার এরকম সবারই থাকে।

আমি ফোন রেখে দেই। তোমাকে ভাবতে থাকি। মৃত্যুর সময়টা ছিলে তুমি গাঢ ঘুমে। সে ঘুম আর কখনও ভাংগেনি। স্বপ্ন ভংগের বেদনা কাটাতে যে মানুষটিকে নিয়ে তুমি আবারও আশার স্বপ্ন দেখেছিলে, যার সন্তানকে তুমি পৃথিবীতে এনেছিলে - সেই ছিল তোমার ঘাতক, হত্যাকারী। যাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে, তারাই তোমাকে অমর্যাদা আর প্রতারনা করেছে সবচেয়ে বেশী। যাদের জন্য সমাজ সংসারের রক্তচক্ষুকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছ, তারা তোমার অনুভূতিকে মাড়িয়ে যেতে দ্বিধা করেনি। এমন কি যার সন্তানদের পৃথিবীতে আনার দুর্বহ কষ্ট টুকু করেছ তার দ্বারাই এই পৃথিবীর আলো বাতাসের অধিকারটুকু পর্যন্ত হারিয়েছ।

শিরোনামেই বলেছি, তোমায় আমি ক্ষমা করতে পারছি না। তুমি কি ভেবেছ এই অক্ষমতা আমার প্রতি তোমার অবহেলার সে সংকীর্ন মানসিকতা থেকে সৃষ্ট? কিংবা, তোমাকে নৈতিকতার কাঠগড়ায় দাড়িয়ে তোমার বিচার করতে চাইছি? না, সেসবের কোনটাই নয়। তুমি এই বিশাল পৃথিবীতে বেচে থাকার অধিকার পাও নি - এত বড় অন্যায় সহ্য করে তুমি তো নীলকন্ঠের মত সমস্ত গরলকে শুষে নিয়েছ। কোন অভিযোগ, ক্ষোভ কিংবা সমালোচনার অবকাশ মাত্র রাখো নি।

তারপরও আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারছি না। যখন তোমার কথা ভাবি, তখন সাথে সাথে আরো দুটি শিশুর কথা আমার মনে উকি দিয়ে যায় - যারা আজ আশ্রয় হীন, ঠিকানা বিহীন। পরকীয়ার আসক্ত মা আর ঘাতক পিতার পরিচয়ই আজ তাদের সম্বল। অথচ তুমি তোমার জীবনের অপূর্নতাকে ভরিয়ে দিতে পারতে এই নিষ্পাপ দুটি শিশুর হাসি দিয়ে। তারাই হতে পারত তোমার পৃথিবী। তোমার কোলে তাদের নিরাপদ আশ্রয় হতে পারত তোমার জীবনের সবচেয়ে ব্ড় পাওয়া।

হয়ত কষ্ট পাচ্ছ আমার কথায়, কিংবা হয়ত নয়। হয়ত আগের মতই ঠোট উল্টে বুঝিয়ে দেবে, আমাকে গুরুত্ব দেবার মত মানসিকতা তোমার নেই। হয়ত তেড়ে এসে বলবে, আমি না হয় তোমার চোখে খারাপ কিন্তু তুমি কেন আমার সম্পর্কে এতসব লিখছ, কেন মানুষকে এত কথা বলছ। যদি আমাকে ভালই বাস, তবে কেন এভাবে ছোট করছ অন্যের সামনে।

সেক্ষেত্রে আমার ছোট্ট একটি কৈফিয়ত। এ চিঠিতে তোমাকে নিয়ে যেসব লিখেছি তার অনেকখানিতে রয়েছে আমার কল্পনা। তাই পাঠকের কাছে এ নিছক একটা গল্প। শুধু তুমি আর আমি জানি এ কাহিনীতে সত্যের ভাগটুকু।