কে কবে প্রথম বলেছিল জন হপকিন্সের ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রামের কথা, তা সম্পূর্ন ভুলে গিয়েছি। কিন্তু আমার মাথায় গেথে গিয়েছিলো এই ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রামের কথা। শোনার সাথে সাথে একটি অসম্ভব ভাবনা মনে উকি দিয়ে যায়। আহা! যদি আমার ছেলেটা ট্যালেন্ট হতে পারত। আনমনে আবার নিজেই হাসি। সে তো আর ততটা ভাল স্টুডেন্ট নয়। অন্তত ট্যালেন্ট হবার মত আহামরি ভাল নয়। ক্লাশে মোটামুটি ভাল করলেও একদম প্রথমে নেই। তাও মনে করলাম, চেষ্টা করে দেখি। চেষ্টাতে কি না হয়। সে লক্ষ্যেই তার বাবাকে বললাম টেস্ট দেয়া যায় কিনা সেটা দেখতে। আমাদের জন্য একটু দূরে হয়ে যায় জন হপকিন্স। কিন্তু মানুষ সেই কতদূর থেকে এসে এই পরীক্ষা দিয়ে যায়। আমরা তবে কেন পারব না? পারতেই হবে।
টেস্ট দেয়াটাও ছিল বহু ঝক্কির। এই টেস্ট দিতে হলে চাই অন্য টেস্টে ৯৮% স্কোর। ভাগ্য ভাল ছিল। ক্যাট, অর্থ্যাৎ ক্যালিফোর্নিয়া এচিভমেন্ট টেস্টে আমার ছেলে আবদুল্লাহ ম্যাথ পার্টে ৯৮% স্কোর করেছিল। সেটা দিয়ে চেষ্টা করলাম। ভাগ্য ছিল প্রসন্ন। রেজিস্ট্রেশন করা গেল। সাত্ত্বনা পেলাম। যাক, অন্তত টেস্ট দিতে পারবে। সেটাই বা কম কি? একটা বাধা তো সামনে থেকে গেল।
পরীক্ষার ঠিক আগে আগে একটা স্যাম্পল প্রশ্ন পেলাম হপকিন্স থেকে। প্রশ্ন থাকে এদের দুই ক্লাশ উপরের স্ট্যান্ডার্ডের। প্রশ্ন দেখে প্রাকটিস করানোর কথা ভাবলাম। কিন্তু সে গুড়ে পড়ল বালি। এক ভাবী, যার ছেলে এই পরীক্ষা দিয়েছিল, তার কাছ থেকে জানলাম এই পরীক্ষার জন্য আর কোন প্র্যাকটিস ম্যাটেরিয়াল নেই। হপকিন্স থেকে যা পাঠিয়েছে ততটুকু ছাড়া আর কিছু কোথাও পাওয়া যায় না। এই পরীক্ষার জন্য আলাদা করে প্রিপারেশনের কোন ব্যাপার নেই।
পরীক্ষার সময় এল। পরীক্ষা দিল। ফলাফল অপ্রত্যাশিত ছিল না। ম্যাথ পার্টে ৯০ এর উপরে স্কোর করেছে। অর্থ্যাৎ শতকরা ৯০ ভাগ ছেলে তার নীচে। আমেরিকানদের ম্যাথের জ্ঞান একটু নীচের দিকে। তাই সেটাতে এশিয়ানরা এগিয়ে থাকে স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু ল্যাংগুয়েজ আর্টস এ আমার ছেলে তেমন সুবিধা করতে পারে নি। সেটাতে আবার আমেরিকানদের জয় জয়কার।
সে বছর ট্যালেন্ট হতে পারল না। কি আর করা। পরের বছরের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। এর মধ্যে আমার চেষ্টা চলল ল্যাংগুয়েজ আর্টস নিয়ে। বিভিন্ন বই দিয়ে প্র্যাকটিস তাকে করালাম। কিন্তু সেবারও একই অবস্থা। ম্যাথে কোয়ালিফাই করলেও, ল্যাংগুয়েজ আর্টসে নয়।
নাহ, এবার পেতেই হবে। জেদ চেপে গেল। চলল প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে স্কুলে স্পেলিং বি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়ে সেও কিছুটা আত্মবিশ্বাসী। সবমিলিয়ে আমার মনে হচ্ছিল সে এবার অবশ্য অবশ্য দুটোতেই নির্বাচিত হয়ে ট্যালেন্ট হবে। তৃতীয় বারের মত সে ট্যালেন্ট সার্চের পরীক্ষা দিল।
শেষ পর্যন্ত আনন্দময় সংবাদটি আমার জীবনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিল। সে ট্যালেন্ট হল। যদিও ল্যাংগুয়েজ আর্টস এ ন্যুনতম নম্বর পেয়ে কোয়ালিফাই করেছে। তাতে কি। ট্যালেন্ট তো হয়েছে।
তবুও ভাগ্যের বিড়ম্বনা যেন লেগেই থাকে। ট্যালেন্ট অনুষ্ঠানের দিনে জন হপকিন্সে আমরা পৌছালাম বেশ দেরী করে। বাল্টিমোরের রাস্তায় আমরা হারিয়ে প্রায় আধা ঘন্টা দেরীতে পৌছি। ততক্ষনে তার নাম ডাকা শেষ। এত খারাপ লাগল আমার। পরে অবশ্য কর্তৃপক্ষকে ধরে আমরা তার নাম আবার ঘোষনা করাই। সে স্টেজে যায়। কিন্তু ভাগ্য এবারও বিড়ম্বিত। দেখলাম ক্যামেরা আনতে ভুলে গেছি। ট্যালেন্টের ছবি আর তোলা হল না।
ট্যালেন্ট হবার সুবাদে সামারে এবার একটা রাইটিং কোর্স নিতে দিল। অসম্ভব বেশী টিউশন। অনলাইন কোর্স অথচ টিউশন প্রায় ৮০০ ডলার। আমার সামর্থ্য সীমিত হলেও এই টাকাটা জোগাড় করলাম। না, কোর্সটা বিফলে যায় নি। খুবই চমৎকার। অনেক কিছুই সে শিখেছে। সেই কোর্সের অংশ হিসেবে সে কয়েকটি লেখা লিখে। যার একটি কবিতা রয়েছে এখানে।
যা হোক, অবশেষে শেষ হল তার প্রোগ্রাম। সেদিন তার শেষ এসাইনমেন্টটায় চোখ বুলালাম। একটি গল্প লিখেছে। পারিবারিক আবহে রচিত। এত চমৎকার হয়েছে। পড়ে খুব ভাল লাগল। ছেলের এই একটি কোর্সের অভিজ্ঞতায় এতটুকু বলতে পারি জন হপকিন্সের ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রাম একটি অতুলনীয় প্রোগ্রাম, মেধার বিকাশে যা অসম্ভব সহায়ক। আমার মত মধ্যবিত্তের হাত দিয়ে এতগুলো টাকা চলে গেলেও কোর্সের কার্যকারিতায় আমি সন্তুষ্ট ।
আজ এ পর্যন্তই। সবাইকে ধন্যবাদ পোস্ট পড়ার জন্য।
Tuesday, September 16, 2008
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
বাংলা লেখা শুরু করেছেন তাহলে।
চমৎকার একটা পোস্ট পড়লাম। মা-ছেলের ট্যালেন্টের গল্প মুগ্ধ করে দিল। আমাদের দেশে কি এরকম হতে পারে না! হয় অবশ্য কোথাও কোথাও। তবে শিশুদের নিয়ে হয় কিনা আমার জানা নেই।
কিছু কিছু করে শুরু করছি। @ভোরের কোলাহল।
আমাদের দেশেও অনেক প্রোগ্রাম আছে। বৃত্তি পরীক্ষা ইত্যাদি। তবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সম্ভবত নেই। @মাহমুদ
Post a Comment