স্বল্প কথায় পরিচিতি:
পশ্চিমে তিনি "দ্য প্রিন্স অব ফিজিশিয়ানস" নামে পরিচিত। তার গ্রন্থ "আল কানুন ফিল থিব" (কানুন অব মেডিসিন) চিকিৎসা শাস্ত্রের মূল অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাঠ্য পুস্তক হিসেবে গন্য হত প্রায় পাচ শতক ধরে । যদিও তিনি ফার্মাকোলজি ও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের প্রভূত উন্নয়ন করেন, তার মূল অবদান ছিল মেডিসিন শাস্ত্রে। তিনি হলিস্টিক মেডিসিনের প্রনেতা - যেখানে একই সংগে শারীরীক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক যোগসূত্রকে বিবেচনায় রেখে রুগীর চিকিৎসা করা হয়। তিনিই প্রথম মানব চক্ষুর সঠিক এনাটমি করেন। যক্ষা রোগ নিয়ে তিনি অভিমত দেন যে যক্ষা একটি ছোয়াচে রোগ। যা তার পরের পশ্চিমা চিকিৎসকবৃন্দ প্রত্যাখ্যান করেন এবং যা আরো পরে সঠিক বলে প্রমানিত হয়। তিনিই প্রথম মেনিনজাইটিসকে ব্যাখা করেন। প্রকৃত পক্ষে তিনিই আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক।
এই "তিনি" আর কেউ নন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ইবনে সিনা। যার অসংখ্য অবদানের গুটি কয়েক অবদানের কথা উপরের প্যারাতে আমি উল্লেখ করেছি। যার জীবন কিংবা কর্মের কোন শেষ নেই, তার সমস্ত অবদান উল্লেখ করার অসম্ভব কোন ইচ্ছেও আমার নেই। তার শুভাকাংখীরা তাকে জ্ঞানার্জন ও গবেষনার প্রানান্ত পরিশ্রম ত্যাগ করে জীবনকে সহজ ভাবে নেবার উপদেশ দিতেন, যা তিনি হেলায় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বলা হয়, তার মাইল স্টোন পুস্তক "কানুন" লিওনার্ডো দ্য ভিনসিকেও প্রভাবিত করেছিল। "কানুন" বারশ শতকে ল্যাটিন ভাষায় অনুদিত হয়ে প্রায় সতেরশ শতক পর্যন্ত পৃথিবীতে চিকিৎসা শাস্ত্রের টেক্স্ট বুক হিসেবে গন্য হত। একজন প্রথিতযশা পশ্চিমা ডক্টর "কানুন"কে "মেডিকেল বাইবেল" বলে ঘোষনা করেন। বুখারায় তার জন্ম স্থানে যে মিউজিয়াম রয়েছে তাতে তার নিবন্ধ, সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট এবং রুগীদের চিকিৎসারত অবস্থায় ছবি - এই সবই স্থান পেয়েছে। তিনি যে শুধু চিকিৎসা শাস্ত্রেই অবদান রেখেছেন তা নয়, বরং এস্ট্রোনমি সহ আরো অনেক শাখায় তার গুরুত্ব বহ অবদান রয়েছে। তিনি মোমেন্টামকে ওজন ও বেগের গুনফলের সমানুপাতিক বলে অভিমত দেন। তিনি আরো অভিমত দেন যে, হাজারো চেষ্টা করলেও সীসা বা তামা থেকে সোনা বানানো যাবে না, যা তার সময়ের অনেক বিজ্ঞানী নিরন্তর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি শুক্র গ্রহকে পৃথিবীর চেয়ে সূর্যের অধিকতর নিকটে অবস্থিত বলে নির্নয় করেন। তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ চাদের একটি ফাটলের নাম তার নামে করা হয়েছে।
জীবদ্দশাতেই একজন সফল চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইবনে সিনা জার্জানের রাজপুত্রের চিকিৎসা করে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। এই জার্জানেই তিনি তার বিখ্যাত বই "কানুন" রচনা করেন। জার্জানের রাজপুত্র অনেক দিন ধরে অসুস্থতায় ছিলেন শয্যাশায়ী। স্থানীয় চিকিৎসকরা কিছুতেই তার অসুস্থতা ধরতে পারছিলেন না, তারা রীতিমত হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। অবশেষে ইবনে সিনার সাহায্য নেন। ইবনে সিনা খেয়াল করলেন রাজপুত্রের সামনে তার প্রেমিকার নাম উচ্চারন করতে পালসের গতি বেড়ে যায়। ইবনে সিনা সহজ ছোট্ট সমাধান দিলেন, "যুগলদের মিলিয়ে দাও।"
মেটাফিজিক্সের প্রতি তার গুরুত্ব যেভাবে এল:
প্রথমে ইবনে সিনা মেটাফিজিক্সকে স্পর্শের বাইরে বলে গুরুত্ব দেন নি। এর অধ্যয়নকে সময় নষ্ট বলে মনে করতেন। কিন্তু একটি বিকেল তাকে বদলে দিল। সে বিকেলে বইয়ের বাজারে এক বিক্রেতা তাকে অনেক কষ্টে তিন দিরহামের বিনিময়ে আরেকজন বিতর্কিত মুসলিম দার্শনিক ফারাবীর "অন দ্য অবজেক্টস অব মেটা ফিজিক্স" বইটিকে কিনতে প্ররোচিত করেন। বিক্রেতা খুব অর্থের দরকার হয়ে পড়েছিল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি বইটি কেনেন। বইটি পড়ার পরে সবকিছু বদলে যায়। ফেলে আসা এরিস্টটলের মেটা ফিজিক্স দর্শনকে আবার গুরুত্ববহ মনে করেন এবং পরদিন এই কৃতজ্ঞতায় গরীবদের অর্থদান করেন। তিনি বলেন, "আমি এরিস্টটলের মেটা ফিজিক্স মোট চল্লিশ বার অধ্যয়ন করে তাকে হৃদয়ে আয়ত্ত্ব করি। তা সত্ত্বেও আমার বোঝায় ঘাটতি থেকে যায়। শেষে ফারাবীর এই বই পড়েই আমি এরিস্টটলের মেটা ফিজিক্স বুঝতে পারি।" তার দর্শনে মেটা ফিজিক্স একটি গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে রয়েছে। তার অন্যতম মাইলস্টোন পুস্তক শিফাকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়: লজিক, ফিজিক্স, মেটা ফিজিক্স, ম্যাথমেটিক্স। এই মেটা ফিজিক্সের উপরে গবেষনা পরবর্তীতে তার বিরোধীদের প্রধান অস্ত্রে পরিনত হয়।
যেভাবে এল কাফের ফতোয়া:
মাত্র দশ বছর বয়েসে অসাধারন মেধাবী ইবনে সিনা হাফিজ হন। আর সতের বছর বয়েসে হন চিকিৎসক। ইবনে নিসা, ল্যাটিন ভাষায় যাকে বলা হয় "আভিসেনা", অভিযুক্ত হন মুরতাদ এবং কাফের হিসেবে। তার বিরুদ্ধে এই ফতোয়া ইস্যু করেন ইমাম গাজ্জালী।
কিন্তু কেন? ইবনে নিসাই তো প্রথম তার দর্শনে আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রমান করার প্রয়াস নেন যা রয়েছে "শিফা"র মেটা ফিজিক্স অধ্যায়ে। তিনি এরিস্টটলের অস্তিত্ব ও করন মতবাদকে ব্যাখা করতে গিয়ে বলেন, কাজ এবং ফলাফল একই সাথে অবস্থান করে। তিনি প্রকৃতির সব কিছুকে একটি চেইনের মাধ্যমে প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, "এই চেইন অসীম হতে পারেনা, অবশ্যই সসীম যার প্রথমে রয়েছেন স্রষ্টা যিনি পরমূখাপেক্ষী নন। যা এই চেইনের একমাত্র ব্যতিক্রম।"
ইবনে সিনার প্রতি ইমাম গাজ্জালীর এই বিরোধীতার মূলে রয়েছে মেটা ফিজিক্সে ইবনে সিনার নিজস্ব দর্শন। তার বিরুদ্ধে কাফের ফতোয়া দেয়া হয় নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রথমত: ইবনে সিনা তার দর্শনে বিশ্বকে চিরজীবী দাবী করেন যার কোন শুরু নেই। যেখানে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ শূন্য থেকে এই পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। দ্বিতীয়ত: তিনি বলেন, আল্লাহ সৃষ্টি এবং ধ্বংস সম্পর্কে সাধারন ভাবে জানেন, কিন্তু পুংখানুপুঙ্খ ভাবে নয়। যেখানে মুসলিমরা বিশ্বাস করে থাকেন, আল্লাহ আক্ষরিক অর্থেই প্রতিটি বিষয় অবগত। তৃতীয়ত, তিনি শারীরীক পুনরুথ্থান নয়, বরং আত্মিক পুনরুথ্থানের উপর জোড় দেন। মূলত এই তিনটি কারনে ইমাম গাজালী ইবনে সিনাকে কাফের সাব্যস্ত করা বাধ্যতামূলক বলে দাবী করেন।
এখন দেখা যাক, এই আপাত বিতর্কিত্ ইস্যু গুলো নিয়ে ইবনে সিনা আসলে কি বলেছিলেন।
ইবনে সিনা এটা বিশ্বাস করতেন যে, এই বিশ্ব চিরজীবী বা আদি অন্ত বিহীন। তবে এটাও বিশ্বাস করতেন যে, বিশ্ব একটি সৃষ্ট বস্তু। তিনি ব্যাখা দেন, সৃষ্ট হবার অর্থ এই নয় যে সময়ের প্রেক্ষিতে তার কোন শুরু আছে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অস্তিত্বের পেছনে কার্যকরন ও প্রয়োজন বিদ্যমান। আল্লাহ এই বিশ্বকে হতে দিয়েছেন, যার শুরু থাকতেও পারে কিংবা নাও থাকতে পারে। তবে শেষ নেই। ইমাম গাজালী চ্যালেন্জ্ঞ দিয়ে বলেন, আল্লাহ যদি একমাত্র স্বাধীন অমূখাপেক্ষী সত্ত্বা হন তবে বিশ্বকে তার পরেই সৃষ্ট হতে হবে, তা অস্তিত্ব ও সময় - দুটোরই মানদন্ডে। সুতরাং তা অনাদি অনন্ত হতে পারে না। এই দর্শনকে কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন ইমাম গাজালী।
এবারে আসা যাক আল্লাহর জ্ঞানের পরিধি নিয়ে ইবনে সিনা কি বলেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ সমস্ত খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত, তবে এই জানাটা সামগ্রিক। সময়ের ভিত্তিতে তার জ্ঞানের কোন পরিবর্তন হয় না। ফলে যখন কোন ইভেন্ট সত্যি সত্যি সংঘটিত হয়, তখন তা তিনি নূতন করে জানতে পারেন না, কারন তার জ্ঞান সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। ইবনে সিনা আল্লাহর "একচ্ছত্র (এবসোলিউট) জ্ঞান"কে "সময়ের সাথে অপরিবর্তনশীল" বলে ব্যাখা করেন।
("When this particular event actually occurs in time, God, not being subject to temporal change, cannot know it. But He also need not know it in this manner for He knows it already".) ইবনে সিনার স্রষ্টা সম্পর্কিত দর্শন সাদামাটা ভাষায় (আমি যা বুঝলাম) হচ্ছে : প্রকৃতির প্রতিটি নিয়ম স্রষ্টার অবগত এবং প্রকৃতির প্রতিটি বস্তু কার্যকরন, ফলাফল ও তাদের সম্পর্কের দ্বারা পরিচালিত। যেহেতু এসব বস্তু নিয়মের বাইরে নয়, এবং সেই নিয়মের খুটিনাটি স্রষ্টার অবগত, তাই এসব বস্তুর খুটিনাটি সম্পর্কে স্রষ্টার ধারনা সামগ্রিক।
সত্যি বলতে কি তার এই ডকট্রিনে আমি কোন কুফরি খুজে পাই নি। যদিও এই ডকট্রিনকেও কুফরী লেবেল সাটা হয়েছে। ইবনে সিনা "স্রষ্টার খুটিনাটি জ্ঞান" কে ব্যাখা করেছেন তার নিজের দর্শন দিয়ে। এই খুটিনাটি জ্ঞানকে তিনি অস্বীকার করেন নি মোটেও। তিনি যুক্তি এবং কার্যকরনকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, সমস্ত ঘটনা প্রবাহ নিয়মের ছকে বাধা বলেই ঘটছে। এই নিয়ম স্রষ্টার তৈরী যার ফলে কোন ঘটনা ঘটলে তা আলাদা ভাবে স্রষ্টার জানার কিছু নেই কারন তা তো নিয়মের প্রেক্ষিতেই ঘটেছে। সেন্স-পারসেপশন, যা ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করে, তা স্রষ্টার ক্ষেত্রে খাটেনা কারন তার জ্ঞান সময়ের উর্ধ্বে এবং সময়ের সাথে অপরিবর্তনশীল। আমি যা বুঝলাম তা হল পুরো বিশ্ব এবং তার ঘটনাপ্রবাহকে একটি if-else সমৃদ্ধ প্রোগ্রাম দিয়ে প্রকাশ করা যায়, যার ইনপুট আউটপুট সহ পুরো প্রোগ্রাম স্রষ্টার জ্ঞানের সীমায়। তাই খুটিনাটি ভাবে কখন কোন পথ ধরে প্রোগ্রাম এগুচ্ছে তা তো স্রষ্টার জানার কোন প্রয়োজন নেই। যা হোক, এই ডকট্রিন তার বিরুদ্ধে ফতোয়ার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাকে সবচাইতে বেশী সমালোচনা সহ্য করতে হয় যে কারনে তা হল শারীরীক পুনরুথ্থান বিষয়ে তার অবস্থান। দাবী করা হয় মৃত্যু পরবর্তী শারীরীক পুনরুথ্থানকে ইবনে সিনা অস্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য শারীরীক পুনরুথ্থানে বিশ্বাস পোষন ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের একটি। নীচের আয়াতগুলোতে সমর্থন পাওয়া যাবে:
"মানুষ কি মনে করে যে আমরা কখনো তার হাড়গোড় একত্রিত করব না। হ্যা, আমরা তার আংগুলগুলো পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।" (ক্কিয়ামাহ: ৩-৪)।
"তারা বলেঃ যখন আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাব, তখনও কি নতুন করে সৃজিত হয়ে উত্থিত হব? বলুনঃ তোমরা পাথর হয়ে যাও কিংবা লোহা। অথবা এমন কোন বস্তু, যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন; তথাপি তারা বলবেঃ আমাদের কে পুর্নবার কে সৃষ্টি করবে। বলুনঃ যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃজন করেছেন। অতঃপর তারা আপনার সামনে মাথা নাড়বে এবং বলবেঃ এটা কবে হবে? বলুনঃ হবে, সম্ভবতঃ শ্রীঘ্রই।" [বনী ইসরাঈল/ইসরাঃ ৪৯-৫১]
শারীরীক পুনরুথ্থানকে অস্বীকার করার জন্য ইমাম গাজ্জালী ও আরো অনেক স্কলার ইবনে সিনাকে কাফের সাব্যস্ত করা বাধ্যতামূলক বলে দাবী করেছিলেন। মূলত এই মতবাদের ভিত্তিতে ইবনে সিনার উপর কুফরী আরোপ করা হয়। এখন প্রশ্ন ইবনে সিনা কি সত্যিই শারীরীক পুনরুথ্থানকে অস্বীকার করেছিলেন? উল্লেখ্য ইবনে সিনা নিজেও বলেছেন মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে ইসলামের আলোতেই ব্যাখা করতে হবে, এছাড়া আর কোন যুক্তি গ্রাহ্য ব্যাখা নেই। ইবনে সিনা আত্মিক পুনরুথ্থানের পক্ষে নীচের আয়াতগুলো দেন:
"হে প্রশান্ত মন।
তুমি তোমার পালন কর্তার দিকে ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।"
(ফজর : ২৭-২৮)
ফেরেশতা ও রূহ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় (মাআরিজ : ৪)
পরবর্তী কালে যখন ইবনে সিনার দর্শনকে আরো বিশ্লেষন করা হয়, তখন দেখা যায় তিনি প্রকৃত পক্ষে শারীরীক পুনরুথ্থানকে পুরো অস্বীকার করেন নি। তিনি সুরা ওয়াকিয়াতে যে তিনটি দলের কথা বলা হয়েছে (আর তোমরা হয়ে পড়বে তিনটি শ্রেনীতে (ওয়াক্কিয়াহ : ৭)), তার তৃতীয় দলটিকে শুধু মাত্র শারীরীক পুনরুথ্থান করা হবে বলে দাবী করেছেন। বাকী দুই দল আত্মিক ভাবেই স্বর্গ লাভ করবে। তৃতীয় দলের শারীরীক পুনরুথ্থান হবে শাস্তির জন্য। সুতরাং ইবনে সিনা শারীরীক পুনরুথ্থানকে একটি বিশেষ দলের জন্য নির্ধারন করেছেন। যার ফলে ইবনে সিনা শারীরীক পুনরুথ্থানকে সম্পূর্ন অস্বীকার করেছেন - বিরোধীদের এই দাবী দুর্বল হয়ে যায়।
এখানে উল্লেখ্য ইসলামের ইতিহাসে যুক্তি এবং লজিককে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়ার সিলসিলা ইবনে সিনাই যে প্রথম শুরু করেন - তা নয়। তার আগে মুতাজিলা গোষ্ঠীও যুক্তিকে আশ্রয় করে ইসলামের অনেক বিভ্রান্তিকর ব্যাখা দেয়। অথচ তাদের প্রতি কেউ কাফের ফতোয়া ইস্যু করে নি। আমার স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা না করে থাকলে হাদীসকে শরিয়ার উৎস হিসেবে প্রথম অস্বীকার করে এই মুতাজিলা গোষ্ঠী। কারন তারা যুক্তি দিয়ে ইসলামের অনেক মৌলিক আকিদা ব্যাখা করতে চাইত, যা অনেক সময় হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হত। ইবনে সিনার দর্শনেও এই মুতাজিলা গোষ্ঠীর প্রভাব কিছুটা দেখা যায়।
ইবনে সিনা আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি নিজেকে জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও একনিষ্ঠ মুসলিম বলে দাবী করতেন। তার প্রথম দুইটি দাবীর সাথে বিশ্ব একমত, যদিও তৃতীয় দাবীটি সর্বজন স্বীকৃত হয় নি। তবে পরবর্তীতে অনেকেই দাবী করেছেন কাফের ফতোয়াটা ইবনে সিনার জন্য ছিল অতিরিক্ত কঠোর একটি ফতোয়া।
কাফের ফতোয়াকে অস্বীকার করে ইবনে সিনার কবিতাটা তুলে দিলাম:
"আমার মত কাউকে ব্লাসফেমীর দায়ে অভিযুক্ত করা সহজ কিংবা সহজলভ্য নয়
আমার চেয়ে দৃঢ় বিশ্বাস আর নেই
আমার মত কেউ যদি অধার্মিক হয়ে থাকে
তবে পৃথিবীতে আর কোন মুসলিম নেই।"
Friday, August 7, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment