কিমিয়া থেকে কেমিস্ট্রি:
গুপ্তবিদ্যার প্রতি আগ্রহ মানুষের চিরন্তন। "আল কেমি" হচ্ছে সেই রকম গুপ্তবিদ্যা, যার দ্বারা মানুষ "এলিক্সির" নামে এমন একটি যাদুকরী বস্তু তৈরী করতে পারবে। সে এলিক্সিরের ছোয়ায় লোহা হয়ে যাবে সোনা, তামা হয়ে যাবে রূপা, আর মানুষের আয়ু যাবে বহুগুন বেড়ে!! লোহা থেকে সোনা বানানো কিংবা জীবনকে দীর্ঘায়িত করার বাসনাই ছিল আল কেমী বিদ্যার মূল উদ্দেশ্য।
"আল কেমি" শব্দটি এসেছে আরবী আল কিমিয়া থেকে। "আল" হচ্ছে "the" এর আরবী এবং "কিমিয়া" এসেছে "কেম" থেকে, যার অর্থ "কালো মাটি"। মিশরের নীল নদের তীরের মাটি কালো হওয়ায় এ নাম, কেননা "আল কেমী"র ব্যপক চর্চা মূলত হয়েছে মিশরে। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, গ্রীক "কায়মা" থেকেও "কেমী" শব্দটি আসতে পারে। "কেমী" শব্দের এটিমোলোজি যাই হোক না কেন, "আল কেমি"র ব্যপক চর্চা তৎকালীন মুসলিম সমাজে হবার ফলে, "আল কেমী" শব্দটির আরবীতে আত্তীকরন হয়ে যায়।
আল কেমী বহু আগে থেকে চলে আসা একটি সাবজেক্ট, পৃথিবীর মানুষ লোহা থেকে সোনা বানানোর অসম্ভব চেষ্টা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই করছে। এরিস্টটলের দর্শন অনুযায়ী, সমস্ত বস্তুই আসলে একই জাতীয় সাবস্ট্যান্স দিয়ে তৈরী - শুধু অনুপাত ভিন্ন। অনুপাতের ভিন্নতার ফলেই একটি পদার্থ হয় লোহা, আর অন্যটি হয় সোনা। আরব বিজ্ঞানী জাবেরও ছিলেন একজন আলকেমিস্ট যিনি এরিস্টটলের এই দর্শনের দ্বারা প্রভাবান্বিত ছিলেন। আর আল কেমী বিদ্যাটি কিছুটা সুপ্ত হওয়ায় জাবেরের বইগুলোও অনেকটা রূপক ভংগিতে লেখা। আল কেমির উপরে লেখা তার বই "কিতাব আল জোহরা"তে তিনি লিখেছেন,
"আল্লাহ যাদের ভালবাসেন তারা ব্যাতীত বাকীদের হতভম্ব করা এবং ভুল পথে নেয়াই এর উদ্দেশ্য। " অন্য জায়গায় জাবের লিখেছেন, "আমার "মাস্টার" আমাকে শাসাচ্ছেন, যাতে এসব বিদ্যা কোন অবিবেচকের হাতে না পড়ে। " আলকেমীর বিদ্যা গুপ্ত রাখার মানসিকতায় বইগুলো লিখেন কঠিন ভাষায় এবং সাধারনের বোধগম্যের বাইরে।
আল কেমীর চর্চা থেকেই জাবের একসময় আবিষ্কার করে ফেললেন অনেক কিছু। আবিষ্কার করেন কি করে তরলের মিশ্রন থেকে একটি তরলকে আলাদা করা যায়, যা ডিস্টিলেশন নামে পরিচিত, আবিষ্কার করেন একুয়া রেজিয়া নামে একটি মিশ্রন যা সোনাকে গলিয়ে দিতে পারে এবং উদ্ভাবন করেন অগুনতি কেমিক্যাল সাবসট্যান্স - যা মরিচা প্রতিরোধ, স্বর্নের কারুকাজ, পোশাকের ওয়াটারপ্রুফ সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়। আল কেমী থেকে তিনি সিস্টেমেটিক এক্সপেরিমেন্টেশনের দ্বারা শুরু করেন আরেকটি সাবজেক্ট, যা পরিচিতি পায় কেমেস্ট্রি হিসেবে। এ প্রসংগে তিনি বলেন, "কেমিস্ট্রির প্রাথমিক কর্তব্য হল, তুমি প্রাকটিক্যাল কাজ করবে এবং এক্সপেরিমেন্ট চালাবে। যারা প্রাকটিক্যাল কাজ করে না এবং এক্সপেরিমেন্ট চালায় না, তারা এ বিষয়ে কোন রকমের দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।"
জাবের ইবনুল হাইয়ানের পরিচয় ও তার সংক্ষিপ্ত জীবনী:
৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে খলিফা উমর ইউফ্রেটিসের পশ্চীম তীরে কুফা শহর প্রতিষ্ঠা করেন। চারিদিক থেকে ইমিগ্রান্ট এসে কুফায় বসতি শুরু করে, একসময় কুফার জনসংখ্যা ২০০০০০ ছাড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে কুফা উমাইয়াদের প্রধান শহরে পরিনত হয়। এই কুফা শহরেই আজদী নামের এক গোত্রের একজন ছিলেন হাইয়ান, যার নেশাগ্রস্ততা শহরে বেশ পরিচিত ছিল। তিনি গোপনে উমাইয়া খলিফাদের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত চলছিলো, তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। ৭১২ শতকে উমাইয়া রাজবংশের জনপ্রিয়তায় এক বিশাল ধ্বস নামে। এছাড়া ব্যপক হারে অমুসলিমদের মুসলিম হওয়ার ফলে উমাইয়া রাজ্য অর্থনৈতিক মন্দার সম্মূখীন হয়। অমুসলিমদের কাছ থেকে আদায়কৃত জিজিয়া ট্যাক্সের পরিমান কমে যায়, যা রিভিনিউতে মারাত্মক ধ্বস নামায়। মুসলিমরা যাকাত দিলেও সে যাকাতের খাত নির্দিষ্ট, সর্বমোট আটটি। ফলে উমাইয়াদের পক্ষে অর্থনৈতিক ধ্বস সামলানো কঠিন হয়ে যায়।
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলীর নেতৃত্বে আব্বাসীয় নেতৃত্ব আসে ক্ষমতায়, যাদেরকে সক্রিয় সহযোগিতা করে শিয়া সম্প্রদায়। জাবেরের পিতা হাইয়ান, যিনি ছিলেন একজন শিয়া, এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। হাইয়ান এক পর্যায়ে উমাইয়াদের হাতে ধরা পড়ে যান এবং নিহত হন। ফলশ্রুতিতে ৭২১ খ্রীষ্টাব্দে জন্ম শিশু জাবের বড় হন পিতাকে ছাড়াই। কৈশোরে তিনি কোরান, গনিত সহ বেশ কিছু বিষয়ে পারংগমতা অর্জন করেন। আব্বাসীয় রাজবংশ অবশেষে প্রতিষ্ঠা পায়। কথিত আছে আব্বাসীয় জেনারেল আবদুল্লাহ একবার ৮০ জন উমাইয়া নেতাকে দাওয়াত করেন। উমাইয়া নেতারা যখন খেতে ব্যস্ত, তখন আবদুল্লাহ আদেশ দেন এদের হত্যা করার জন্যে। শুধু একজন জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে বেচে যান, যিনি পরে ইউফ্রেটিস পার হয়ে স্পেনে পৌছান। মোট কথা, ৭৫০ শতকের এর মধ্যেই উমাইয়াদের হঠিয়ে আব্বাসীয়রা ক্ষমতা সুদৃঢ় করে নেয়।
আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় আসার পরে জাবির এক সময় আব্বাসীয় উজির বার্মিকীর নেক নজর লাভ করেন, যার মাধ্যমে খলিফার সাথে দেখা করতে সমর্থ হন। ইয়াহিয়া বার্মিকীর একজন অতীব সুন্দরী দাসী অসুস্থ হয়ে গেলে জাবের তাকে এলিক্সির খাইয়ে পুরো সুস্থ করে দেন (যা ছিল এক ধরনের দ্রবন)। আব্বাসীয়দের কাছে হাইয়ানের সন্তান হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পান দুভাবে: খলিফা হারুন অর রশিদের দরবারে তিনি আল কেমিস্ট হিসেবে নিয়োগ পান এবং অন্যদিকে বিখ্যাত শিয়া আলেম জাফর ইবনে আবি তালিব তাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহন করেন। শিয়াদের কাছে আল কেমী সবসময়েই আদৃত একটি বিদ্যা ছিল। আলী (রা) বলেন, "আল কেমী হচ্ছে প্রফেসীর বোন।" খলিফার দরবারে তিনি অনেকদিন কাজ করেন। খলিফা হারুন অর রশিদ পরবর্তীতে বার্মিকীদের আচরনে মহা বিরক্ত হয়ে একজনের প্রানদন্ড ও বাকীদের বরখাস্ত করেন। তখন জাবের কুফাতে ফিরে আসেন। বার্মিকীদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার মাশুল গুনতে হয় হাউজ এরেস্ট হয়ে। অবশেষে ৮১৫ সালে এ অবস্থাতেই তিনি মৃত্যু বরন করেন।
জাবেরের কিছু গুরুত্ববহ অবদান:
ডিস্টিলেশন হচ্ছে দুটি দ্রবনকে তাদের ভিন্ন স্ফুটনাংকের মাধ্যমে আলাদা করা। জাবির ইবনুল হাইয়ানের এই আবিষ্কার আলকেমী থেকে কেমিস্ট্রির পথে ছিল মাইলস্টোন উত্তরন। বিজ্ঞানী জাবির এক্সপেরিমেন্টেশনের উপর গুরুত্ব দেন এবং আল কেমীকে সাইন্স রূপ দিয়ে কেমিস্ট্রি হিসেবে দাড় করান। তিনি সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড, ডিস্টিলেশন, ক্রিস্টালাইজেশন, লিকুইফ্যাকশন, অক্সিডাইজেশন, ইভাপোরেশন, ফিলট্রেশন সহ বেশ কিছু কেমিক্যাল এবং তার প্রসেস ব্যখা করে যান, যা আজকের কেমিস্ট্রির ভিত্তিমূল।
বিজ্ঞানী জাবের হাইড্রোক্লোরিক এসিড এবং নাইট্রিক এসিড আবিষ্কার করে তার মিশ্রন থেকে আবার "একুয়া রেজিয়া" আবিষ্কার করেন যা সোনাকে দ্রবীভূত করে। যার ফলে সোনার বিশুদ্ধিকরন এবং আহরন সহজ হয়ে যায়। এছাড়া তিনি সাইট্রিক এসিড, এসিটিক এসিড এবং টারটারিক এসিড আবিষ্কার করেন। জাবেরের এই রসায়নের জ্ঞান বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সফলভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং তার ফলে অনেক ধরনের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস উন্নত হয়। যাদের মধ্যে রয়েছে, স্টীল প্রস্তুতকরন, মরিচা প্রতিরোধকরন, স্বর্ন খোদাইকরন, পোশাকের ডাই তৈরী এবং চামড়ার ট্যানিং। তিনি গ্লাস তৈরীতে ম্যাংগানিজ ডাই অক্সাইড ব্যবহার বিধি দেখান, যা আজকের দিনেও ব্যবহৃত হয়। তার এসব আবিষ্কার আজকের কেমিস্ট্রি এবং কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এর ভিত্তিমূল।
জাবেরিয়ান করপাস:
জাবেরের গ্রন্থের পরিমান এত বেশী যে ধারনা করা হয় একা জাবেরের পক্ষে এতগুলো বই লেখা অসম্ভব। জাবেরের পরবর্তি কালে জাবেরের নামে ইসমাইলিয়া সম্প্রদায় এসব বইয়ের কিছু অংশ লিখতে পারে বলে মনে করা হয়। জাবেরের গ্রন্থ সমগ্রকে চার ভাগে ভাগ করা যায়:
১। আত্মিক আলকেমি: এ বিষয়ে প্রায় ১১২ টি বই রয়েছে যা বার্মিকি উজিরদের উৎসর্গ করে লেখা।
২। দর্শন : ১০ টি বই রয়েছে পিথাগোরাস, সক্রেটিস, এরিস্টটল ও প্লেটোর দর্শনকে ব্যাখা করে। জাবের তার লেখায় গ্রীক ও মিশরীয় আলকেমিস্টদের প্রতি শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেছেন।
৩। ৭০টি বই রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে।
৪। আরো কিছু বই রয়েছে "ব্যালেন্স অব ন্যাচারের" উপরে।
কারো পক্ষে এত বই লেখা কি করে সম্ভব? তাই, ধারনা করা হয়, জাবেরের অনুসারীরা হয়তবা তার নামে কিছু বই লিখে রেখেছে। এ নিয়ে এখনো গবেষনা চলছে।
আগেই বলেছি, জাবেরের অনেক বই আল কেমির প্রথা অনুযায়ী খুব রহস্যের ভংগিতে লেখা। জাবেরের স্ক্রীপ্টের এই গুপ্ত ভাব থেকে ইংরেজীতে "gibberish" শব্দটি এসেছে। যার অর্থ "যা বোধগম্য নয়।"
জাবের প্রসংগে ফেইথ ফ্রিডমের ভন্ডামি:
ফেইথ ফ্রিডম সাইটের কথা আপনারা শুনেছেন কিনা জানিনা। ইসলামের উপর তিতা বিরক্ত হয়ে যারা ইসলাম পরিত্যাগ করেছেন, তাদের মিলন মেলা হল এই সাইট। কে ইসলাম ত্যাগ করল, এটা আমার কাছে খুব বড় কোন ইস্যু নয়। ইসলাম একই সাথে বিশ্বাস এবং আচার সমৃদ্ধ একটি ধর্ম। এই বিশ্বাসকে অস্বীকার করে কেউ ইসলাম ত্যাগ করতে চাইলে সে অধিকারটুকু তার থাকা উচিত। মানুষের বিশ্বাসের স্বাধীনতার এই বিষয়টি মুসলিমদের স্বীকার করে নেয়া উচিত। এতে ক্ষতির কিছু নেই, বিশেষত যেখানে পৃথিবীতে ইসলাম গ্রহনের হার তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী। এছাড়া পবিত্র কোরানেও বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিষয়টি অনেকবার এসেছে।
তবে ফেইথ ফ্রীডমের ক্ষেত্রে কথা হল: যতটা না সত্য, তার চেয়ে বেশী বিদ্বেষ দিয়ে পরিচালিত এই সাইট। এই বিদ্বেষ শুধু সাধারন ভাবে ইসলামের বিশ্বাস এবং আচারের বিরুদ্ধে নয়, বরং মুসলিমদের গৌরবময় ঐতিহ্য বিচারের ক্ষেত্রেও। আমি রসায়নবিদ জাবিরকে নিয়ে লেখার সময় গুগলে একটা সার্চ দেই। অনেক সাইটের মধ্যে ফেইথ ফ্রিডম ছিল একটি, যেখানে জাবের প্রসংগে নীচের কথাগুলো রয়েছে:
"Muslim apologists claim that Jabir Ibn Haiyan was the father of chemistry though Chemistry was practiced from ancient ages. Egyptians used distillation process in 3000 years BC and the Greeks in 1000 BC. Zosimus of Panopolis wrote "The Divine Art of Making Gold and Silver", in the 4th century. Jabir Ibn Haiyan should not be called the founder of Chemistry, which is nothing but the usual deceiving technique of Muslim apologists."
মোদ্দা কথা, জাবেরকে কেন প্রাচীন রসায়নের জনক বলা হবে, সেটাই তাদের কাছে বিষ্ময়। এটা নাকি মুসলিমদের ভন্ডামির আরেকটি পরিচয়!!!!
আমি এ বিষয়ে প্রথমে বলতে চাই যে, জনক শব্দটি কিছুটা আপেক্ষিক। জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির বিষয়টি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াতে কেউ হয়ত কোন আইডিয়া প্রথমে দেন, আবার কেউ বা তার উপর ব্যপক কাজ করে পৃথিবীর কাছে তা পরিচিত করেন। ফলশ্রুতিতে অনেক সময় দেখা যায়, যার কাজের মাধ্যমে পৃথিবী পরিচিত হয় একটি নূতন বিষয়ে, তাকেই "জনক" উপাধি দেয়া হয়। যার ফলে "জনক" শব্দটি নিয়ে রয়েছে ব্যপক বিতর্ক। তবে ফেইথ ফ্রিডম যে দাবীটা করেছে যে, জাবিরকে রসায়নের জনক বানানোটা মুসলিমদের আরেকটা ভন্ডামি - সেটা সম্পূর্ন অসত্য। জাবির তার অবদানের মাধ্যমেই পৃথিবীর সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়েছেন। উইকিপিডিয়াতে (Click This Link) তাকে প্রাচীন রসায়নের জনক বলা হয়েছে তার কাজকে মূল্যায়ন করেই। জাবেরকে রসায়নের জনক স্বীকৃতি দিয়ে এরকম শত সহস্র লেখা পাওয়া যাবে যার উপর মুসলিমদের কোন প্রভাব নেই। সুতরাং ফেইথ ফ্রিডমের এসব কথা শুধুই বিদ্বেষ প্রসূত, মনের জ্বালা মেটানোর ব্যর্থ প্রয়াস মাত্র।
জাবিরের অবদান অবশ্য ফেইথ ফ্রিডম অস্বীকার করেনি। কিন্তু জাবিরকে তারা নন-প্রাকটিসিং মুসলিম বলে দাবী করে, প্রশ্ন উঠিয়েছে, "জাবেরের ধর্মীয় চেতনার সাথে একমত না হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমরা কেন জাবেরকে নিয়ে গৌরব বোধ করে এবং তাকে মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে দাবী করে?"
জাবেরকে নিয়ে মুসলিমরা গৌরব বোধ করার মূল কারন রসায়ন শাস্ত্রে জাবেরের অবদান। আর শুধু মুসলিমরাই গর্ব বোধ করেছেন, এই দাবীও পুরো সত্য নয়। যা হোক, মূল প্রসংগ হচ্ছে: ফেইথ ফ্রিডমের দাবী জাবের আসলে মূলধারার মুসলিম ছিলেন না - এটা কতটুকু সত্য?
জাবের ৮০০ শতকের একজন বিজ্ঞানী। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার সম্পর্কে খুব নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় না। জাবেরের বিষয়ে যে বিষয়টি ইতিহাসবিদদেরকে সন্দিহান করে তুলেছিল তা হল জাবেরের রেখে যাওয়া বিশাল গ্রন্থভান্ডার। এত গ্রন্থ একজনের পক্ষে লেখা কি আদৌ সম্ভব - এই প্রশ্ন থেকেই জাবের হয়ে থাকেন এক রহস্যাবৃত ব্যক্তি। ধীরে ধীরে নিরন্তর গবেষনার ফলে জাবের সম্পর্কিত রহস্যের জট খুলতে থাকে। জাবেরের গ্রন্থের পাশাপাশি ল্যাবরেটারী এবং সেখানে রাখা মর্টার পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদরা এসব নিদর্শন থেকে ঘটনাপ্রবাহের সূতো গাথতে থাকেন। কিন্তু সে ইতিহাস কখনই অনিশ্চয়তার ছাপমুক্ত ছিল না। যতটুকু জানা যায় তাতে জাবেরের মূলধারার ইসলামের প্রতি আসক্তি ও বিশ্বাস বেশ ভাল ভাবেই ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। জাবের ছিলেন প্রখ্যাত শিয়া ফকীহ এবং ইমাম জাফর সাদিকের শিষ্য (http://en.wikipedia.org/wiki/Ja'far_al-Sadiq)। জাবেরের লেখা গ্রন্থে ইমাম জাফর সাদিককে "মাস্টার" বলে সম্বোধন করা হয়েছে। জাফর সাদিক শিয়া হলেও সুন্নীদের মাঝে গ্রহনযোগ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব। জাফর সাদিকের শিষ্যের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আবু হানিফা, যিনি সুন্নীদের হানাফী মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা, মালিক ইবনুল আনাস, যিনি মালিকি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং ওয়াসিল ইবনুল আতা, যিনি মুতাজিলা মতবাদের জনক। ইমাম জাফর সাদিক মতবাদের উপরে সর্বস্তরের কাছে গ্রহনযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব। সেজন্য শিয়া মতবাদের হওয়ার জন্য কেন জাবের ইবনুল হাইয়ানকে সাধারন মুসলিমদের থেকে ভিন্ন মতাদর্শের হতে হবে, তা বোধগম্য নয়। শিয়াদের বিভিন্ন বইতে জাবেরকে ইমামের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে দেখানো হয়েছে। একজন নন-প্রাকটিসিং মুসলিম কেনই বা ইমাম জাফর সাদিকের মত একজন উচুস্তরের ইসলামী ব্যক্তিত্বের ঘনিষ্ঠ ও স্থায়ী সাহচর্য পাবে, সেটা মোটেও বোধগম্য নয়। সুতরাং ফেইথ ফ্রিডম কিসের উপর ভিত্তি করে জাবেরকে ভিন্ন চেতনাধারী দাবী করছে, তা বোঝা গেল না।
একটা ব্যাখা হতে পারে ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের দ্বারা জাবের ব্যবহৃত হয়েছেন। জাবেরের নাম করে ইসমাইলিয়ারা নিজেদের লেখা চালিয়েছে। সেজন্য মনে হতে পারে জাবের বুঝি ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের একজন। কিন্তু সেটা তো অসম্ভব, কারন ইসমাইলিয়া মতবাদের জন্ম হয়েছে জাবেরের পরবর্তী কালে। এছাড়া যেসব বই জাবেরের লেখা বলে ধারনা করা হয়, তাতে কোথাও ইসমাইলিয়া বা সে জাতীয় মতবাদের প্রভাব দেখা যায় না। জাবের শিয়া ছিলেন, যিনি ইমাম জাফর সাদিকের ঘনিষ্ঠ সহচর - ইতিহাস সেদিকেই জোরালো ইংগিত দেয়। কিছুটা সুফী ভাব জাবেরের মধ্যে ছিল, তবে এটাও সম্ভবত ইমাম জাফর সাদিকের প্রভাবে প্রভাবিত হবার জন্যে। তবে জাবেরের ধর্ম দর্শন নয়, ইসলামী জ্ঞানচর্চা নয়, বরং মূল অবদান রসায়ন শাস্ত্রে - সেটা অনস্বীকার্য।
=========================================
Wednesday, November 25, 2009
Tuesday, November 17, 2009
About education policy
শিক্ষা নীতি নিয়ে বেশ আলোচনা দেখছি। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে নূতন শিক্ষা নীতি করার তোড় জোড় চলছে। সে বিষয়ে বিভিন্ন জ্ঞানী গুনী বিভিন্ন রকম বক্তব্য রাখছেন। সামহোয়ার ব্লগও তার বাইরের কিছু নয়। তাই এখানেও এ বিষয়ে নানা পোস্ট দেখছি।
আমারও কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করে। কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে বার বার ইচ্ছে করে ব্লগ সাইটে উকি দিতে। মাঝে মাঝে অন্যের পোস্টে মন্তব্য করি, তবে সবসময় সে অভিজ্ঞতা সুখকর হয় না। মানুষের সাথে মেলামেশায় আমার খুব সুনাম সমাজে নেই, ব্লগেও এটা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুই বছরের উপরে আমার এখানে বিচরন, অথচ শুভাকাংখী ব্লগার বলতে নাহিদ, সোহায়লা, কিংবা পারভেজ ভাই এর মত দুই চারজন হাতে গোনা। আমি তো কোনদিনও কারো আত্ম সম্মানে আঘাত করি না, ডেল কার্নেগীর বন্ধু বিষয়ক বই অনাগ্রহ, বিতৃষ্ণা নিয়ে পড়ি শুধুমাত্র বন্ধুবৎসল হবার জন্যে, কিন্তু তবুও আজতক বন্ধুহীন হয়েই রইলাম। যার নয়ে হয় না, নব্বইতেও সে না হবার দলেই থাকে।
শিক্ষা নীতি নিয়ে কথা বলতে এসে নিজের প্রসংগে এত গুলো কথার অবতারনার কারন একটিই। আমি বাংলাদেশের প্রস্তাবিত শিক্ষা নীতি নিয়ে খুব বেশী কিছু জানি না, অথচ এ নিয়ে পোস্ট দিতে চাই। প্রেম ভালোবাসা টাইপ পোস্ট দেবার ক্ষমতা আমার নেই, তার জন্য রোমান্টিক মননশীলতার দরকার, যা আমার কোন কালেই ছিল না। কিন্তু শিক্ষানীতির বিষয়ে জ্ঞান না থাকলেও, শিক্ষার বিষয়ে আগ্রহটুকু আছে। যার ফলে পোস্টে হয়ত এ বিষয়ে নিজের এলোমেলো ভাবনাগুলো তুলে ধরা আমার পক্ষে অসম্ভব হবে না।
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি নিয়ে কথা বলতে আমার আগ্রহের কারন আমার নিজের শৈশব বেলার অভিজ্ঞতা। জীবনের মেটামরফোসিস বিশ্লেষন করলে দেখা যায় মানুষের সবচেয়ে ভাবনাহীন আলোকিত সময়টি হচ্ছে তার শৈশব - যে সময়টা মানুষ থাকে সবচেয়ে বেশী স্বাধীন এবং উৎফুল্ল। সে সময়টাতে তাকে শেখাতে হয় আনন্দের সাথে। একবার যদি শেখার আনন্দ থেকে বিচ্যুত হয়ে সে নিরানন্দতার সাথে জুটি বাধে, তবে সে শিক্ষার সাথে পরবর্তীতে একাত্ম হওয়া তার পক্ষে কঠিন।
প্রথমেই বলে রাখছি, আমি বিভাজনমূলক শিক্ষার সমর্থক। আমেরিকার এই বিভাজন মূলক শিক্ষা ব্যবস্থার যে ভাল দিকটি আমার কাছে ফুটে উঠেছে তা হল, এর ফলে শিশুদের শিক্ষিত হবার সুব্যবস্থা অনেক বেশী থাকে। উদাহরন স্বরূপ বলা চলে, এদের একটি স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা হল হোম স্কুলিং। অনেক পিতামাতা পাবলিক স্কুলে সন্তানদের দিতে চান না, কিংবা দেবার অবস্থায় থাকেন না। তারা স্বচ্ছন্দে নিজেদের সন্তানদের হোম স্কুলিং করিয়ে থাকেন। পাবলিক স্কুল ফ্রী, তবে ডিসিপ্লিনের জন্য অনেকে প্রাইভেট স্কুলে অনেক টিউশন দিয়ে বাচ্চাদের পড়িয়ে থাকেন। ক্যাথলিক স্কুল কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় স্কুল গুলোও সগৌরবে টিকে আছে তাদের পরিবেশ ও ডিসিপ্লিনের কারনে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিষয়টি আমার কাছে উদ্বেগজনক মনে হয়েছে, তা হল পাশের হার। এখনও পাশের হার শতকরা ৫০ ভাগের বেশী নয়। তার মানে অর্ধেকেরও বেশী ছাত্র ছাত্রী তাদের কাংখিত লক্ষ্যে পৌছুতে সক্ষম নয়।
এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা নীতিতে জোর দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এই ৫০ ভাগ ছাত্র ছাত্রী কি জন্য পিছিয়ে আছে। এদেরকে কি করে সামনে এগিয়ে আনা যায়? এরা কি কারনে শিক্ষা কারিকুলামের মূল সুরটি ধরতে ব্যর্থ? পাশ্চাত্যের উদাহরন টানা যাক। পাশ্চাত্যে শিক্ষার মান মোটামুটি উন্নত। কোন সাবজেক্টে কোন ছাত্র ছাত্রী পিছিয়ে থাকলে, স্কুল থেকে তার জন্য আলাদা টিউটরিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়া তাদের টেক্সট বইগুলো সহজ ভাষায় লেখা, ছবি সমৃদ্ধ এবং সিলেবাস খুব একটা বিস্তৃত নয়। যার ফলে ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে একটা ন্যুনতম মান অর্জন করা খুব কঠিন হয় না। বাংলাদেশে কেন তবে তা এত কঠিন? তার কারন, শিক্ষক ছাত্রের উচু অনুপাতের ফলে ছাত্রের জন্য একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয় সময় প্রদানে অক্ষমতা, সিলেবাসের ব্যপকতা, টেক্স্ট বইগুলো দুর্বোধ্য ভাষা এবং সবশেষে একটি বিষয়কে সহজ ভাবে উপস্থাপনায় শিক্ষকের ব্যর্থতা। মূলত এই কারন গুলোই ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যর্থতার জন্য দায়ী। ছাত্র ছাত্রীদের কাছে শিক্ষাকে সহজবোধ্য আর আনন্দময় করে তোলা যে কোন শিক্ষা নীতিতে সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। যার অবধারিত কনসিকুয়েন্স হচ্ছে পাশের হার বেড়ে যাওয়া। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি শিক্ষা নীতি যখন আলোচিত হয়, তখন এই বিষয়টিকে খুব একটা জোর দিতে দেখা যায় না। ধরে নেয়া হয়, ফাকিবাজ হলে তার পক্ষে অকৃতকার্য হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ফাকিবাজ হবার ছিদ্র গুলো বন্ধ করতে চাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমাদের ছেলেমেয়েদের সবাইকে কেন এত এত বেশী বই পড়তে হবে, আর এত বেশী জানতে হবে? দিন না, জেনারেল সিলেবাস একটু কমিয়ে। টেক্স্ট বই গুলো হোক ছবি আর ব্যখা সমৃদ্ধ। ভূগোল ক্লাশে গ্লোব রাখা হোক। তারা যা জানবে, তা সঠিক ভাবে জানবে। আর যেসব ছাত্র ছাত্রীরা এগিয়ে, তাদের জন্য অতিরিক্ত কিছু অধ্যয়ন থাকুক। যা আমেরিকাতে ম্যাগনেট প্রোগ্রামে করা হয়ে থাকে। এগোনো পেছোনো সব ছাত্র ছাত্রীকে একই সিলেবাস অনুসরন করে চলার চেয়ে, বরং পিছিয়ে থাকদের জন্য ন্যুনতম সিলেবাস আর এগিয়ে থাকাদের জন্য বিস্তৃত সিলেবাস বেশী ফলদায়ক বলে মনে করি। যার ফলে, পিছিয়ে থাকা ছাত্র ছাত্রীরা একটা ন্যুনতম মান অর্জন করে এগোতে পারবে। আর এগিয়ে থাকা ছাত্র ছাত্রীরাও তাদের কাংখিত মানের লক্ষ্যে পৌছুতে পারবে।
শিক্ষা ব্যবস্থা বিভাজনমূলক হলে তার বিষয়ে নীতিমালা অনুসরন করতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক যে, মাদ্রাসায় ধর্ম বিষয়ে বেশী জোর দেয়া হবে, কিন্তু সাধারন শিক্ষায় তা দেয়া হবে না। তা সত্ত্বেও কিছু বিষয়কে সবার জন্য আবশ্যিক করে দেয়া দরকার। সেগুলো হতে পারে, ল্যাংগুয়েজ আর্টস, সাইন্স, ম্যাথ, সোশাল স্টাডিজ। যেমনটি আমেরিকাতে রয়েছে। ল্যাংগুয়েজ আর্টস আবার বিভক্ত হতে পারে কয়েকটি ভাগে: স্পেলিং, গ্রামার, রিডিং, রাইটিং। আমেরিকাতে এর বাইরে ইসলামিক স্কুল গুলো কোরান, এরাবিক, ইসলামিক স্টাডিস পড়িয়ে থাকে। আর সাধারন পাবলিক স্কুলগুলো সম্ভবত আর্টস, স্প্যানিশ -এসব পড়িয়ে থাকে। বিষয়গুলো অপশনাল হওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈচিত্রতা চলে আসে।
বাংলাদেশে দেখলাম ফাইন আর্টসকে বাধ্যতামূলক করা হবে। এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। ড্রইং আর মাটির কাজ - এই দুটো সাবজেক্ট আমার প্রাইমারী স্কুলে ছিল। পাশ মার্কস জোগাড় যে কি কঠিন ছিল, তা মনে করলে আজো শিউরে উঠি। এসব ক্লাসে আমাকে কেউ কখনও ধরে ধরে শিখিয়ে দেয় নি। আমার মনে হয় না এসব বিষয় আবশ্যিক হিসেবে থাকা উচিত। যতদিন না ভালভাবে ছাত্র ছাত্রীদের শেখানোর ব্যবস্থা থাকবে, ততদিন সেলাই, মাটির কাজ কিংবা ড্রইং সাবজেক্টগুলো অতিরিক্ত হিসেবে রাখা প্রয়োজন।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল ধারার সাবজেক্ট হিসেবে বাংলা, ইংরেজী, সাইন্স, ম্যাথ এবং সোশাল স্টাডিজ আবশ্যিক হিসেবে থাকা প্রয়োজন। সাহিত্য ও সোশাল স্টাডিজ মাদ্রাসা বোর্ডের জন্য আলাদা হতে পারে। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন কিংবা শপথ - অন্ততপক্ষে একটিকে মাদ্রাসাগুলোর বেছে নিতে হবে।
সাধারন শিক্ষায়ও ধর্ম ও কোরান শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত। তবে সাধারন শিক্ষায় আরবী থাকার কোন দরকার নেই। ক্লাস এইট পর্যন্ত আমাদের আরবী পড়তে হয়েছে, অথচ তা থেকে কিছু শিখতে পারিনি। তাই আরবী আমার কাছে অহেতুক মনে হয়। আমেরিকার সাধারন স্কুলে ধর্ম পড়ানো হয় না। বাংলাদেশের সাধারন স্কুলে ধর্ম শিক্ষা স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে। এখনো অভিভাবকরা ধর্ম শিক্ষার পক্ষে রয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ গড়তে ধর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাহলেই কেউ আর ধর্মের নামে বিভ্রান্ত হবে না।
বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার, যা অন্য দেশের জন্য মডেল হতে পারে। এই পরিবেশকে উৎসাহিত করতে সোশাল স্টাডিজে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন উৎসব যেমন, ঈদ, পুজা, পূর্নিমা সহ বিভিন্ন উৎসবের বর্ননা যোগ করা যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি অন্য ধর্মের খুটিনাটি শেখানোটা অপ্রয়োজনীয়।
যাক, অনেক কথা বলে ফেললাম। হয়ত বা অরন্যে রোদন। কিন্তু নিজের কথ গুলো বলার আনন্দ থেকে নিজেকে ফাকি দিতে চাইলাম না।
আমারও কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করে। কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে বার বার ইচ্ছে করে ব্লগ সাইটে উকি দিতে। মাঝে মাঝে অন্যের পোস্টে মন্তব্য করি, তবে সবসময় সে অভিজ্ঞতা সুখকর হয় না। মানুষের সাথে মেলামেশায় আমার খুব সুনাম সমাজে নেই, ব্লগেও এটা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুই বছরের উপরে আমার এখানে বিচরন, অথচ শুভাকাংখী ব্লগার বলতে নাহিদ, সোহায়লা, কিংবা পারভেজ ভাই এর মত দুই চারজন হাতে গোনা। আমি তো কোনদিনও কারো আত্ম সম্মানে আঘাত করি না, ডেল কার্নেগীর বন্ধু বিষয়ক বই অনাগ্রহ, বিতৃষ্ণা নিয়ে পড়ি শুধুমাত্র বন্ধুবৎসল হবার জন্যে, কিন্তু তবুও আজতক বন্ধুহীন হয়েই রইলাম। যার নয়ে হয় না, নব্বইতেও সে না হবার দলেই থাকে।
শিক্ষা নীতি নিয়ে কথা বলতে এসে নিজের প্রসংগে এত গুলো কথার অবতারনার কারন একটিই। আমি বাংলাদেশের প্রস্তাবিত শিক্ষা নীতি নিয়ে খুব বেশী কিছু জানি না, অথচ এ নিয়ে পোস্ট দিতে চাই। প্রেম ভালোবাসা টাইপ পোস্ট দেবার ক্ষমতা আমার নেই, তার জন্য রোমান্টিক মননশীলতার দরকার, যা আমার কোন কালেই ছিল না। কিন্তু শিক্ষানীতির বিষয়ে জ্ঞান না থাকলেও, শিক্ষার বিষয়ে আগ্রহটুকু আছে। যার ফলে পোস্টে হয়ত এ বিষয়ে নিজের এলোমেলো ভাবনাগুলো তুলে ধরা আমার পক্ষে অসম্ভব হবে না।
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি নিয়ে কথা বলতে আমার আগ্রহের কারন আমার নিজের শৈশব বেলার অভিজ্ঞতা। জীবনের মেটামরফোসিস বিশ্লেষন করলে দেখা যায় মানুষের সবচেয়ে ভাবনাহীন আলোকিত সময়টি হচ্ছে তার শৈশব - যে সময়টা মানুষ থাকে সবচেয়ে বেশী স্বাধীন এবং উৎফুল্ল। সে সময়টাতে তাকে শেখাতে হয় আনন্দের সাথে। একবার যদি শেখার আনন্দ থেকে বিচ্যুত হয়ে সে নিরানন্দতার সাথে জুটি বাধে, তবে সে শিক্ষার সাথে পরবর্তীতে একাত্ম হওয়া তার পক্ষে কঠিন।
প্রথমেই বলে রাখছি, আমি বিভাজনমূলক শিক্ষার সমর্থক। আমেরিকার এই বিভাজন মূলক শিক্ষা ব্যবস্থার যে ভাল দিকটি আমার কাছে ফুটে উঠেছে তা হল, এর ফলে শিশুদের শিক্ষিত হবার সুব্যবস্থা অনেক বেশী থাকে। উদাহরন স্বরূপ বলা চলে, এদের একটি স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা হল হোম স্কুলিং। অনেক পিতামাতা পাবলিক স্কুলে সন্তানদের দিতে চান না, কিংবা দেবার অবস্থায় থাকেন না। তারা স্বচ্ছন্দে নিজেদের সন্তানদের হোম স্কুলিং করিয়ে থাকেন। পাবলিক স্কুল ফ্রী, তবে ডিসিপ্লিনের জন্য অনেকে প্রাইভেট স্কুলে অনেক টিউশন দিয়ে বাচ্চাদের পড়িয়ে থাকেন। ক্যাথলিক স্কুল কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় স্কুল গুলোও সগৌরবে টিকে আছে তাদের পরিবেশ ও ডিসিপ্লিনের কারনে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিষয়টি আমার কাছে উদ্বেগজনক মনে হয়েছে, তা হল পাশের হার। এখনও পাশের হার শতকরা ৫০ ভাগের বেশী নয়। তার মানে অর্ধেকেরও বেশী ছাত্র ছাত্রী তাদের কাংখিত লক্ষ্যে পৌছুতে সক্ষম নয়।
এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা নীতিতে জোর দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এই ৫০ ভাগ ছাত্র ছাত্রী কি জন্য পিছিয়ে আছে। এদেরকে কি করে সামনে এগিয়ে আনা যায়? এরা কি কারনে শিক্ষা কারিকুলামের মূল সুরটি ধরতে ব্যর্থ? পাশ্চাত্যের উদাহরন টানা যাক। পাশ্চাত্যে শিক্ষার মান মোটামুটি উন্নত। কোন সাবজেক্টে কোন ছাত্র ছাত্রী পিছিয়ে থাকলে, স্কুল থেকে তার জন্য আলাদা টিউটরিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়া তাদের টেক্সট বইগুলো সহজ ভাষায় লেখা, ছবি সমৃদ্ধ এবং সিলেবাস খুব একটা বিস্তৃত নয়। যার ফলে ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে একটা ন্যুনতম মান অর্জন করা খুব কঠিন হয় না। বাংলাদেশে কেন তবে তা এত কঠিন? তার কারন, শিক্ষক ছাত্রের উচু অনুপাতের ফলে ছাত্রের জন্য একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয় সময় প্রদানে অক্ষমতা, সিলেবাসের ব্যপকতা, টেক্স্ট বইগুলো দুর্বোধ্য ভাষা এবং সবশেষে একটি বিষয়কে সহজ ভাবে উপস্থাপনায় শিক্ষকের ব্যর্থতা। মূলত এই কারন গুলোই ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যর্থতার জন্য দায়ী। ছাত্র ছাত্রীদের কাছে শিক্ষাকে সহজবোধ্য আর আনন্দময় করে তোলা যে কোন শিক্ষা নীতিতে সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। যার অবধারিত কনসিকুয়েন্স হচ্ছে পাশের হার বেড়ে যাওয়া। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি শিক্ষা নীতি যখন আলোচিত হয়, তখন এই বিষয়টিকে খুব একটা জোর দিতে দেখা যায় না। ধরে নেয়া হয়, ফাকিবাজ হলে তার পক্ষে অকৃতকার্য হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ফাকিবাজ হবার ছিদ্র গুলো বন্ধ করতে চাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমাদের ছেলেমেয়েদের সবাইকে কেন এত এত বেশী বই পড়তে হবে, আর এত বেশী জানতে হবে? দিন না, জেনারেল সিলেবাস একটু কমিয়ে। টেক্স্ট বই গুলো হোক ছবি আর ব্যখা সমৃদ্ধ। ভূগোল ক্লাশে গ্লোব রাখা হোক। তারা যা জানবে, তা সঠিক ভাবে জানবে। আর যেসব ছাত্র ছাত্রীরা এগিয়ে, তাদের জন্য অতিরিক্ত কিছু অধ্যয়ন থাকুক। যা আমেরিকাতে ম্যাগনেট প্রোগ্রামে করা হয়ে থাকে। এগোনো পেছোনো সব ছাত্র ছাত্রীকে একই সিলেবাস অনুসরন করে চলার চেয়ে, বরং পিছিয়ে থাকদের জন্য ন্যুনতম সিলেবাস আর এগিয়ে থাকাদের জন্য বিস্তৃত সিলেবাস বেশী ফলদায়ক বলে মনে করি। যার ফলে, পিছিয়ে থাকা ছাত্র ছাত্রীরা একটা ন্যুনতম মান অর্জন করে এগোতে পারবে। আর এগিয়ে থাকা ছাত্র ছাত্রীরাও তাদের কাংখিত মানের লক্ষ্যে পৌছুতে পারবে।
শিক্ষা ব্যবস্থা বিভাজনমূলক হলে তার বিষয়ে নীতিমালা অনুসরন করতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক যে, মাদ্রাসায় ধর্ম বিষয়ে বেশী জোর দেয়া হবে, কিন্তু সাধারন শিক্ষায় তা দেয়া হবে না। তা সত্ত্বেও কিছু বিষয়কে সবার জন্য আবশ্যিক করে দেয়া দরকার। সেগুলো হতে পারে, ল্যাংগুয়েজ আর্টস, সাইন্স, ম্যাথ, সোশাল স্টাডিজ। যেমনটি আমেরিকাতে রয়েছে। ল্যাংগুয়েজ আর্টস আবার বিভক্ত হতে পারে কয়েকটি ভাগে: স্পেলিং, গ্রামার, রিডিং, রাইটিং। আমেরিকাতে এর বাইরে ইসলামিক স্কুল গুলো কোরান, এরাবিক, ইসলামিক স্টাডিস পড়িয়ে থাকে। আর সাধারন পাবলিক স্কুলগুলো সম্ভবত আর্টস, স্প্যানিশ -এসব পড়িয়ে থাকে। বিষয়গুলো অপশনাল হওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈচিত্রতা চলে আসে।
বাংলাদেশে দেখলাম ফাইন আর্টসকে বাধ্যতামূলক করা হবে। এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। ড্রইং আর মাটির কাজ - এই দুটো সাবজেক্ট আমার প্রাইমারী স্কুলে ছিল। পাশ মার্কস জোগাড় যে কি কঠিন ছিল, তা মনে করলে আজো শিউরে উঠি। এসব ক্লাসে আমাকে কেউ কখনও ধরে ধরে শিখিয়ে দেয় নি। আমার মনে হয় না এসব বিষয় আবশ্যিক হিসেবে থাকা উচিত। যতদিন না ভালভাবে ছাত্র ছাত্রীদের শেখানোর ব্যবস্থা থাকবে, ততদিন সেলাই, মাটির কাজ কিংবা ড্রইং সাবজেক্টগুলো অতিরিক্ত হিসেবে রাখা প্রয়োজন।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল ধারার সাবজেক্ট হিসেবে বাংলা, ইংরেজী, সাইন্স, ম্যাথ এবং সোশাল স্টাডিজ আবশ্যিক হিসেবে থাকা প্রয়োজন। সাহিত্য ও সোশাল স্টাডিজ মাদ্রাসা বোর্ডের জন্য আলাদা হতে পারে। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন কিংবা শপথ - অন্ততপক্ষে একটিকে মাদ্রাসাগুলোর বেছে নিতে হবে।
সাধারন শিক্ষায়ও ধর্ম ও কোরান শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত। তবে সাধারন শিক্ষায় আরবী থাকার কোন দরকার নেই। ক্লাস এইট পর্যন্ত আমাদের আরবী পড়তে হয়েছে, অথচ তা থেকে কিছু শিখতে পারিনি। তাই আরবী আমার কাছে অহেতুক মনে হয়। আমেরিকার সাধারন স্কুলে ধর্ম পড়ানো হয় না। বাংলাদেশের সাধারন স্কুলে ধর্ম শিক্ষা স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে। এখনো অভিভাবকরা ধর্ম শিক্ষার পক্ষে রয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ গড়তে ধর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাহলেই কেউ আর ধর্মের নামে বিভ্রান্ত হবে না।
বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার, যা অন্য দেশের জন্য মডেল হতে পারে। এই পরিবেশকে উৎসাহিত করতে সোশাল স্টাডিজে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন উৎসব যেমন, ঈদ, পুজা, পূর্নিমা সহ বিভিন্ন উৎসবের বর্ননা যোগ করা যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি অন্য ধর্মের খুটিনাটি শেখানোটা অপ্রয়োজনীয়।
যাক, অনেক কথা বলে ফেললাম। হয়ত বা অরন্যে রোদন। কিন্তু নিজের কথ গুলো বলার আনন্দ থেকে নিজেকে ফাকি দিতে চাইলাম না।
blog rating/ban
ISSUES ABOUT BLOG BAN:
বাংলা ব্লগ এখনও তার শৈশব কাটায় নি। আমাদের ব্লগারদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তিন বছর আগের সেই ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এবং আজকের ব্লগিং প্লাটফর্মের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল দূরত্ব। এবং সেটাই নির্দেশ করছে বাংলা ব্লগিং এর সাফল্য।
বাংলা ব্লগকে সাধারন বাংগালীর কাছে জনপ্রিয় করতে যে প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিতেই হয়, তা হল সামহোয়ার ইন। ব্লগিং প্লাটফর্মের সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে ধীরে ধীরে জয় করে সামহোয়ার এখন মোটামুটি স্থায়ীত্ব লাভ করেছে। এছাড়াও প্রথম আলো ব্লগ ও আমার ব্লগও মোটামুটি মানের জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে ব্লগ জগতকে একটি বিকল্প মিডিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে আরো বহু সময় দিতে হবে। কিছুদিন আগে আমি আমার একটি লেখায় ব্লগের এই প্রাথমিক সাফল্যকে স্বীকৃতি জানিয়ে লিখেছিলাম:
"তবে আশার কথা এই যে প্লাটফর্মের সংখ্যা বাড়ছে। চাইলেও কারো কন্ঠরোধ করা আর সম্ভবপর হবে না। ইন্টারনেট এক বিশাল সমুদ্র। সেখানে "যে লড়ে সে টেকে" বা "survival of the fittest" মতবাদের সার্থক রূপ প্রতিফলিত হয়। আর এই "লড়া"টা হতে হবে বুদ্ধিভিত্তিক, নোংরামি ভিত্তিক নয়। প্লাটফর্মের সংখ্যা বেড়ে গেল আপনা আপনিই বুদ্ধি ভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরী হবে, নোংরামী দিয়ে তা বন্ধ করা যাবে না।"
ব্লগিং এর একটি চ্যালেন্জ্ঞ হচ্ছে ব্যান। ব্লগ একটি হালকা মেজাজের প্লাটফর্ম বিধায় এখানে অনেক সময় অনেকেই অনেক কথাবার্তা লিখে থাকেন। যার ফলে শুধু অস্থির মেজাজের নয়, বরং অনেক ভাল ভাল ব্লগারদের উপরেও ব্যানের তলোয়ার নেমে এসেছে। ব্লগের মূল প্রান হল তার ব্লগাররা। ডিসিপ্লিনারী একশনের তোড়ে যদি ব্লগাররাই ব্লগিং এর পরিবেশ না পায়, তাহলে ব্লগ আর জেলখানার মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। ব্লগিং এর ডিসিপ্লিনারী একশন হিসেবে ব্যান তাই খুব পছন্দনীয় কোন ডিসিপ্লিনারী একশন নয়। তা সত্ত্বেও "ব্যান" এখনও ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোর মূল ডিসিপ্লিনারী একশন। কিছু দিন আগে প্রথম আলো ব্লগে ম্যাভেরিক ভাই ব্যান পরবর্তী উল্লাস জাতীয় কথাবার্তা নিরুৎসাহিত করতে অনুরোধ জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। কথা হচ্ছে, যাকে ব্যান করা হয়েছে সে কোন ভাবেই আর আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারছে না। যে ব্যান হয়, সে অনেকের কাছে অপ্রিয়, তবে কারো কারো কাছে সে প্রিয়। তাই, এ জাতীয় উল্লাস সূচক কথাবার্তা স্বভাবতই অনেককে আহত করে থাকে। সুতরাং এ বিষয়টির দিকে ব্লগ কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরূরী।
দ্বিতীয় ইস্যুটি হল "স্থায়ী ব্যান" কিংবা "লগ ইন" ব্যান। ক্রমাগত ব্লগ রুল ভংগ করা, কিংবা নিশ্চিত ভাবে ব্লগ পরিবেশকে বার বার উস্কানীর চেষ্টা ব্যতীরেকে কারো উপর এ ধরনের চূড়ান্ত শাস্তি না প্রয়োগ করাই ভাল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও দেখা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে সেরকম কোন অভিযোগ নেই, তাদের বিরুদ্ধেও এরকম শাস্তির খাড়া নেমে এসেছে। এই বিষয়টির নিয়েও কর্তৃপক্ষ নজর দেবেন আশা করি। এটি একজন "ভিকটিম" ব্লগার শুধু নয়, বরং পুরো ব্লগ কমিউনিটিকে এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়। ব্লগ রুল ভংগ করা যে ব্লগারের স্বভাব কৌশল নয়, তার ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে "চূড়ান্ত ব্যান" কাম্য নয়। প্রতিপক্ষ ব্লগাররা হয়ত এতে সাময়িক আনন্দ লাভ করতে পারে, তবে এর প্রতিক্রিয়া সুদূর প্রসারী। যার ফলশ্রূতিতে ব্লগিং প্লাটফর্মগুলো এখনও তাদের পুরোনো ব্লগারদের ধরে রাখতে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা ব্লগিং প্লাটফর্মের ব্যর্থতা, যার মুখোমুখি হওয়া জরূরী।
শেষ কথা হল, ব্লগারের লেখার ক্ষমতা, তার ব্লগ বয়স - এগুলোও ব্যানের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। তিন বছরের পুরোনো ব্লগার যে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, আর তিন দিনের ব্লগার যে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি -ব্লগ নীতিমালা দুজনের ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযুক্ত হওয়া অন্তত আমি সমর্থন করতে পারছি না। পুরোনো ব্লগারদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা কাম্য। তেমনি ভাবে, যেসব ব্লগারের লেখা সার্বিকভাবে সবার গ্রহনযোগ্যতা পায়, তাদের ক্ষেত্রেও কিছুটা শিথিলতা দেয়া হোক।
(আমার এই লেখাটি সামহোয়ারে সদ্য ব্যান হওয়া নাহিদকে উৎসর্গ করে। তার ব্যানই আমাকে এ লেখাটি লিখতে উৎসাহী করেছে। তার আনব্যানের বিষয়টি সম্পূর্নভাবে কর্তৃপক্ষের বিবেচনার বিষয়, তবে তাকে "আনব্যান" দেখলে আমি খুশী হই।)
হ্যাপি ব্লগিং।
ISSUES ABOUT BLOG RATING:
সামহোয়ার ব্লগে মাইনাস রেটিং এর জন্য নূতন নিয়ম হয়েছে। কেউ ব্লকড হলে সে আর ব্লককারী ব্লগারের পোস্টে মাইনাস রেটিং করতে পারবে না।
আমি এই নিয়ম টেস্ট করতে গিয়ে একজনের ব্লগের একটি পোস্টে মাইনাস দিলাম (যার ব্লগে আমি ব্লকড বলে জানতাম)। অপেক্ষা করছি কি হয় সেটা দেখার জন্য। দেখি মাইনাস রেটিং কাজ করল। বিষয় কি? উল্টো হলো কেন? দেখলাম তার ব্লগে আমি আর এখন ব্লকড নেই - আনব্লক হয়ে গেছি। ধূর ছাই, অহেতুক মাইনাসটা পড়ল। যাহোক, আরেকজনের ব্লগে গিয়ে অবশ্য নিয়মটা ভেরিফাই করে আসলাম। তার ব্লগে এখনও আমি ব্লকড বলে মাইনাসের নিয়মটা টেস্ট করা গেল।
ব্লগার ফকির ইলিয়াস বলেছেন মাইনাসের এই নিয়মটির প্রস্তাব তিনি করেছিলান।
Click This Link
ফকির ইলিয়াসের জন্য যদি মাইনাসের এই নিয়ম চালু হয়ে থাকে তবে সেটা খুব একটা বড় অন্যায় নয়। কারন উনার এমন অনেক লেখায় মাইনাসের পাহাড় পড়ে যে সেটা খুব জঘন্য লাগে, নিজের কাছেই বিব্রত লাগে।
তবে এই নিয়মটির প্রস এন্ড কনস দুটো দিকই আছে।
প্রথমেই বলে রাখি আমি একজন মাইনাস খাওয়া ব্লগার। আমার পোস্টে মাইনাসের আধিক্য। কিন্তু সেটা আমি কি করে যেন ইগনোর করতে পেরেছি। আমার একটি পোস্টে আমি বিডিআর বিদ্রোহে সরকারের ঢালাও সাধারন ক্ষমার বিরোধিতা করেছিলাম। ব্যপক মাইনাস পড়ে সে পোস্টে। পরে দেখা গেল সরকার নিজেই পিছু হঠেছে সাধারন ক্ষমা থেকে। আবেগ দিয়ে যে দেশ চালানো যায় না, সেটা সরকার দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু আমি তখন ঠিক একই কথা বলায় আম ব্লগাররা তা পছন্দ করে নি। গনহারে মাইনাস সহ্য করতে হয়।
সামহোয়ারে মাইনাসের ব্যপক অপপ্রয়োগের অন্যতম সফল একটি দৃষ্টান্ত হল মাহবুব মোর্শেদের উপর কিছু ব্লগারদের প্রতিশোধ নেয়া। এই মাইনাস অস্ত্র উনার উপর সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়। উনি কাবু হন এই অস্ত্রে।
নূতন নিয়মে এসব পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাবে সম্ভবত। ভুয়া নিকের অধিকারী হয়ে যাকে অপছন্দ করি তাকে মাইনাসের আধিক্য দিয়ে অপদস্ত করতে চাওয়ার চলে আসা বিষয়টা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত হবে।
কিন্তু অপর পিঠও তো রয়েছে।
মাইনাস কি লেখককে কিছুই দেয় নি।
পোস্ট ভাল কি মন্দ তা বোঝা যায় মাইনাস রেটিং দিয়ে।
মানুষের সেন্টিমেন্ট কোনদিকে সেটা বোঝার একটি দিক নিদের্শনা হল মাইনাস/প্লাস রেটিং।
সাধারনের মাঝে ব্লগারের গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু সেটাও বোঝা যায় মাইনাস থেকে। অতিশয় খারাপ পোস্টও কোন প্রিয় ব্লগারের কাছ থেকে এলে আমরা মাইনাস দিতে কষ্ট পাই। আর অপ্রিয় ব্লগারের পোস্টে ছুতো খুজি মাইনাস দেবার।
এই তিনটি কারনের দ্বারাই একজন ব্লগার মাইনাস রেটিং পেয়ে থাকে। তাই মাইনাস একটি বড় শক্তিশালী ইনফরমেশন।
যেমন, আমার ব্লগে ইদানিং মাইনাস খুব বেশী আর দেখছি না। এর মানে ধরে নিচ্ছি, মানুষ এখন আর আমাকে ততটা অবিশ্বাস করছে না। আস্তে আস্তে আমার উপর মানুষের বিরক্তি কমে আসছে।
অথচ এই ইনফরমেশনটা সামনে থেকে জানতে হলে আমাকে এখন সবাইকে আনব্লক করতে হবে। কিন্তু গালিবাজ, আর ফ্লাডিং এর রিস্ক তাতে পুরোপুরি থেকে যায়।
সবশেষে:
ফকির ইলিয়াস তার পোস্টে বলেছেন:
"আমার বিশ্বাস প্রকৃত লেখক-লেখিকারা এই সংযোজনে মুক্তির নিঃশ্বাস
নিচ্ছেন।"
আমার কিন্তু বরং মনে হচ্ছে আমি অনেক কিছু হারালাম (উল্লেখ্য আমি নিজেকে প্রকৃত লেখিকার কাতারে ফেলে থাকি)। আগে মাইনাসের জন্য হলেও গালিবাজ ব্লগাররা (যাদের ব্লক করে রেখেছি) আমার পোস্ট পড়ত। এখন সে দায়টা তাদের আর নেই।
নিঃশ্বাস ফেললাম, তবে তা আক্ষেপের।
বি: দ্র: এই পোস্টটি লেখার পর বুঝলাম নিয়মটি শুধু মাইনাস নয়, বরং প্লাসের জন্যও প্রযোজ্য। ব্লগের কিছু পোস্ট পড়ে আমার মনে হয়েছিল, এটা বুঝি শুধু মাইনাসের জন্য প্রযোজ্য।
স্যরি ফর দ্য মিসটেক।
বাংলা ব্লগ এখনও তার শৈশব কাটায় নি। আমাদের ব্লগারদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তিন বছর আগের সেই ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এবং আজকের ব্লগিং প্লাটফর্মের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল দূরত্ব। এবং সেটাই নির্দেশ করছে বাংলা ব্লগিং এর সাফল্য।
বাংলা ব্লগকে সাধারন বাংগালীর কাছে জনপ্রিয় করতে যে প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিতেই হয়, তা হল সামহোয়ার ইন। ব্লগিং প্লাটফর্মের সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে ধীরে ধীরে জয় করে সামহোয়ার এখন মোটামুটি স্থায়ীত্ব লাভ করেছে। এছাড়াও প্রথম আলো ব্লগ ও আমার ব্লগও মোটামুটি মানের জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে ব্লগ জগতকে একটি বিকল্প মিডিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে আরো বহু সময় দিতে হবে। কিছুদিন আগে আমি আমার একটি লেখায় ব্লগের এই প্রাথমিক সাফল্যকে স্বীকৃতি জানিয়ে লিখেছিলাম:
"তবে আশার কথা এই যে প্লাটফর্মের সংখ্যা বাড়ছে। চাইলেও কারো কন্ঠরোধ করা আর সম্ভবপর হবে না। ইন্টারনেট এক বিশাল সমুদ্র। সেখানে "যে লড়ে সে টেকে" বা "survival of the fittest" মতবাদের সার্থক রূপ প্রতিফলিত হয়। আর এই "লড়া"টা হতে হবে বুদ্ধিভিত্তিক, নোংরামি ভিত্তিক নয়। প্লাটফর্মের সংখ্যা বেড়ে গেল আপনা আপনিই বুদ্ধি ভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরী হবে, নোংরামী দিয়ে তা বন্ধ করা যাবে না।"
ব্লগিং এর একটি চ্যালেন্জ্ঞ হচ্ছে ব্যান। ব্লগ একটি হালকা মেজাজের প্লাটফর্ম বিধায় এখানে অনেক সময় অনেকেই অনেক কথাবার্তা লিখে থাকেন। যার ফলে শুধু অস্থির মেজাজের নয়, বরং অনেক ভাল ভাল ব্লগারদের উপরেও ব্যানের তলোয়ার নেমে এসেছে। ব্লগের মূল প্রান হল তার ব্লগাররা। ডিসিপ্লিনারী একশনের তোড়ে যদি ব্লগাররাই ব্লগিং এর পরিবেশ না পায়, তাহলে ব্লগ আর জেলখানার মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। ব্লগিং এর ডিসিপ্লিনারী একশন হিসেবে ব্যান তাই খুব পছন্দনীয় কোন ডিসিপ্লিনারী একশন নয়। তা সত্ত্বেও "ব্যান" এখনও ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোর মূল ডিসিপ্লিনারী একশন। কিছু দিন আগে প্রথম আলো ব্লগে ম্যাভেরিক ভাই ব্যান পরবর্তী উল্লাস জাতীয় কথাবার্তা নিরুৎসাহিত করতে অনুরোধ জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। কথা হচ্ছে, যাকে ব্যান করা হয়েছে সে কোন ভাবেই আর আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারছে না। যে ব্যান হয়, সে অনেকের কাছে অপ্রিয়, তবে কারো কারো কাছে সে প্রিয়। তাই, এ জাতীয় উল্লাস সূচক কথাবার্তা স্বভাবতই অনেককে আহত করে থাকে। সুতরাং এ বিষয়টির দিকে ব্লগ কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরূরী।
দ্বিতীয় ইস্যুটি হল "স্থায়ী ব্যান" কিংবা "লগ ইন" ব্যান। ক্রমাগত ব্লগ রুল ভংগ করা, কিংবা নিশ্চিত ভাবে ব্লগ পরিবেশকে বার বার উস্কানীর চেষ্টা ব্যতীরেকে কারো উপর এ ধরনের চূড়ান্ত শাস্তি না প্রয়োগ করাই ভাল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও দেখা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে সেরকম কোন অভিযোগ নেই, তাদের বিরুদ্ধেও এরকম শাস্তির খাড়া নেমে এসেছে। এই বিষয়টির নিয়েও কর্তৃপক্ষ নজর দেবেন আশা করি। এটি একজন "ভিকটিম" ব্লগার শুধু নয়, বরং পুরো ব্লগ কমিউনিটিকে এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়। ব্লগ রুল ভংগ করা যে ব্লগারের স্বভাব কৌশল নয়, তার ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে "চূড়ান্ত ব্যান" কাম্য নয়। প্রতিপক্ষ ব্লগাররা হয়ত এতে সাময়িক আনন্দ লাভ করতে পারে, তবে এর প্রতিক্রিয়া সুদূর প্রসারী। যার ফলশ্রূতিতে ব্লগিং প্লাটফর্মগুলো এখনও তাদের পুরোনো ব্লগারদের ধরে রাখতে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা ব্লগিং প্লাটফর্মের ব্যর্থতা, যার মুখোমুখি হওয়া জরূরী।
শেষ কথা হল, ব্লগারের লেখার ক্ষমতা, তার ব্লগ বয়স - এগুলোও ব্যানের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। তিন বছরের পুরোনো ব্লগার যে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, আর তিন দিনের ব্লগার যে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয় নি -ব্লগ নীতিমালা দুজনের ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযুক্ত হওয়া অন্তত আমি সমর্থন করতে পারছি না। পুরোনো ব্লগারদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা কাম্য। তেমনি ভাবে, যেসব ব্লগারের লেখা সার্বিকভাবে সবার গ্রহনযোগ্যতা পায়, তাদের ক্ষেত্রেও কিছুটা শিথিলতা দেয়া হোক।
(আমার এই লেখাটি সামহোয়ারে সদ্য ব্যান হওয়া নাহিদকে উৎসর্গ করে। তার ব্যানই আমাকে এ লেখাটি লিখতে উৎসাহী করেছে। তার আনব্যানের বিষয়টি সম্পূর্নভাবে কর্তৃপক্ষের বিবেচনার বিষয়, তবে তাকে "আনব্যান" দেখলে আমি খুশী হই।)
হ্যাপি ব্লগিং।
ISSUES ABOUT BLOG RATING:
সামহোয়ার ব্লগে মাইনাস রেটিং এর জন্য নূতন নিয়ম হয়েছে। কেউ ব্লকড হলে সে আর ব্লককারী ব্লগারের পোস্টে মাইনাস রেটিং করতে পারবে না।
আমি এই নিয়ম টেস্ট করতে গিয়ে একজনের ব্লগের একটি পোস্টে মাইনাস দিলাম (যার ব্লগে আমি ব্লকড বলে জানতাম)। অপেক্ষা করছি কি হয় সেটা দেখার জন্য। দেখি মাইনাস রেটিং কাজ করল। বিষয় কি? উল্টো হলো কেন? দেখলাম তার ব্লগে আমি আর এখন ব্লকড নেই - আনব্লক হয়ে গেছি। ধূর ছাই, অহেতুক মাইনাসটা পড়ল। যাহোক, আরেকজনের ব্লগে গিয়ে অবশ্য নিয়মটা ভেরিফাই করে আসলাম। তার ব্লগে এখনও আমি ব্লকড বলে মাইনাসের নিয়মটা টেস্ট করা গেল।
ব্লগার ফকির ইলিয়াস বলেছেন মাইনাসের এই নিয়মটির প্রস্তাব তিনি করেছিলান।
Click This Link
ফকির ইলিয়াসের জন্য যদি মাইনাসের এই নিয়ম চালু হয়ে থাকে তবে সেটা খুব একটা বড় অন্যায় নয়। কারন উনার এমন অনেক লেখায় মাইনাসের পাহাড় পড়ে যে সেটা খুব জঘন্য লাগে, নিজের কাছেই বিব্রত লাগে।
তবে এই নিয়মটির প্রস এন্ড কনস দুটো দিকই আছে।
প্রথমেই বলে রাখি আমি একজন মাইনাস খাওয়া ব্লগার। আমার পোস্টে মাইনাসের আধিক্য। কিন্তু সেটা আমি কি করে যেন ইগনোর করতে পেরেছি। আমার একটি পোস্টে আমি বিডিআর বিদ্রোহে সরকারের ঢালাও সাধারন ক্ষমার বিরোধিতা করেছিলাম। ব্যপক মাইনাস পড়ে সে পোস্টে। পরে দেখা গেল সরকার নিজেই পিছু হঠেছে সাধারন ক্ষমা থেকে। আবেগ দিয়ে যে দেশ চালানো যায় না, সেটা সরকার দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু আমি তখন ঠিক একই কথা বলায় আম ব্লগাররা তা পছন্দ করে নি। গনহারে মাইনাস সহ্য করতে হয়।
সামহোয়ারে মাইনাসের ব্যপক অপপ্রয়োগের অন্যতম সফল একটি দৃষ্টান্ত হল মাহবুব মোর্শেদের উপর কিছু ব্লগারদের প্রতিশোধ নেয়া। এই মাইনাস অস্ত্র উনার উপর সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়। উনি কাবু হন এই অস্ত্রে।
নূতন নিয়মে এসব পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাবে সম্ভবত। ভুয়া নিকের অধিকারী হয়ে যাকে অপছন্দ করি তাকে মাইনাসের আধিক্য দিয়ে অপদস্ত করতে চাওয়ার চলে আসা বিষয়টা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত হবে।
কিন্তু অপর পিঠও তো রয়েছে।
মাইনাস কি লেখককে কিছুই দেয় নি।
পোস্ট ভাল কি মন্দ তা বোঝা যায় মাইনাস রেটিং দিয়ে।
মানুষের সেন্টিমেন্ট কোনদিকে সেটা বোঝার একটি দিক নিদের্শনা হল মাইনাস/প্লাস রেটিং।
সাধারনের মাঝে ব্লগারের গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু সেটাও বোঝা যায় মাইনাস থেকে। অতিশয় খারাপ পোস্টও কোন প্রিয় ব্লগারের কাছ থেকে এলে আমরা মাইনাস দিতে কষ্ট পাই। আর অপ্রিয় ব্লগারের পোস্টে ছুতো খুজি মাইনাস দেবার।
এই তিনটি কারনের দ্বারাই একজন ব্লগার মাইনাস রেটিং পেয়ে থাকে। তাই মাইনাস একটি বড় শক্তিশালী ইনফরমেশন।
যেমন, আমার ব্লগে ইদানিং মাইনাস খুব বেশী আর দেখছি না। এর মানে ধরে নিচ্ছি, মানুষ এখন আর আমাকে ততটা অবিশ্বাস করছে না। আস্তে আস্তে আমার উপর মানুষের বিরক্তি কমে আসছে।
অথচ এই ইনফরমেশনটা সামনে থেকে জানতে হলে আমাকে এখন সবাইকে আনব্লক করতে হবে। কিন্তু গালিবাজ, আর ফ্লাডিং এর রিস্ক তাতে পুরোপুরি থেকে যায়।
সবশেষে:
ফকির ইলিয়াস তার পোস্টে বলেছেন:
"আমার বিশ্বাস প্রকৃত লেখক-লেখিকারা এই সংযোজনে মুক্তির নিঃশ্বাস
নিচ্ছেন।"
আমার কিন্তু বরং মনে হচ্ছে আমি অনেক কিছু হারালাম (উল্লেখ্য আমি নিজেকে প্রকৃত লেখিকার কাতারে ফেলে থাকি)। আগে মাইনাসের জন্য হলেও গালিবাজ ব্লগাররা (যাদের ব্লক করে রেখেছি) আমার পোস্ট পড়ত। এখন সে দায়টা তাদের আর নেই।
নিঃশ্বাস ফেললাম, তবে তা আক্ষেপের।
বি: দ্র: এই পোস্টটি লেখার পর বুঝলাম নিয়মটি শুধু মাইনাস নয়, বরং প্লাসের জন্যও প্রযোজ্য। ব্লগের কিছু পোস্ট পড়ে আমার মনে হয়েছিল, এটা বুঝি শুধু মাইনাসের জন্য প্রযোজ্য।
স্যরি ফর দ্য মিসটেক।
Subscribe to:
Posts (Atom)